নওগাঁ প্রতিনিধি : উত্তরের জেলা নওগাঁয় আমন ধান কাটা শুরু হলেও মোকামে আসেনি নতুন চাল। মোকামে পুরনো চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও মোটা চালের দাম পাইকারিতে কেজিপ্রতি এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে। তবে খুচরা পর্যায়ে এ দাম বেড়েছে চার থেকে পাঁচ টাকা।
মোকামে বেচাকেনা কম হওয়ায় অনেকটা অলস সময় পার করছেন মহাজনরা। নতুন ধান বাজারে আসতে এখনো ১৫-২০ দিন বাকি। এ সময়টাতে চিকন চালের দাম না বাড়লেও মজুত স্বল্পতার কারণে মোটা চালের দাম বেড়েছে। এছাড়া বাজারে মোটা চালের চাহিদা বৃদ্ধিও দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দেখছেন চালকল মালিক সমিতির নেতারা।
সরকার আমন মৌসুমে ধান-চালের দাম নির্ধারণ করে দিলেও চালের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় চালকল মালিকরা। ৪২ টাকা কেজিতে চাল দিতে গেলে এবারও লোকসান গুনতে হতে পারে, এমন আশঙ্কা তাদের।
অন্যদিকে চাল সরবরাহকারীরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দামের তেমন পরিবর্তন না হলেও খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজিতে ভোক্তা পর্যায়ে প্রভাব পড়ছে।
গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সরেজমিনে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চকগৌরি হাটবার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে স্বর্ণা-৫ জাতের ধান ১২০০ টাকা, ৫৬ জাতের ১৪০০-১৪২০ টাকা, ৭৫ জাতের ১২৫০-১৩০০ টাকা এবং কাটারি ১৫০০-১৫৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতি মণ ধানের দাম ৫০-৭০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি মোকামে স্বর্ণা-৫ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের চাল ৫৭ টাকা, পারিজা ৪৯ টাকা। এছাড়া সরু বা চিকন জাতের চাল প্রতি কেজি কাটারি ৭০ টাকা ও জিরাশাইল ৬৭ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
শহরের পৌর খুচরা বাজারে ভাই ভাই খাদ্য ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী ছাদেক আলী জাগো নিউজকে বলেন, স্বর্ণা-৫ মোটা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৫ টাকা কেজি। এছাড়া ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের চাল ৫৫ টাকা, পারিজা ৫২ টাকা, জিরাশাইল ৬০-৬৫ টাকা এবং কাটারি ৬৫-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সরু চালের দাম স্থিতিশীল বলে জানান তিনি।
চাল সরবরাহকারী বকুল হোসেন বলেন, পাইকারি মোকাম থেকে চাল কিনে আটটি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে থাকি। চাহিদা বেশি হওয়ায় পাইকারিতে মোটা চাল কেজিতে সর্বোচ্চ এক টাকা বেড়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছে- খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়েছে। এতে ভোক্তারা বিপাকে পড়েছেন।
চালের পাইকারি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, মোকামে মোটা চালের দাম কেজিতে এক টাকা বেড়েছে। তবে সরু বা চিকন চালের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা এখনো সেভাবে চালের দাম বাড়াইনি। সম্প্রতি বাজারে ধানের দাম বাড়ায় চালের দামও বেড়েছে।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, বাজারে মোটা এবং সরু চালের দামের ব্যবধান অনেক বেড়েছে। এ কারণে অনেক ভোক্তা সরু চাল থেকে মোটা চালের দিকে ঝুঁকেছেন। পাশাপাশি রোপা-আমন মৌসুমে বাজারে মোটা ধান আসতে এখনো প্রায় ১৫-২০ দিন বাকি। এ কারণে বাজারে মোটা চালের দাম পাইকারিতে কেজিতে সর্বোচ্চ এক টাকা বেড়েছে।
তিনি বলেন, এ বছর অনাবৃষ্টি, তেল, সার ও কীটনাশক এবং শ্রমিক মজুরি বাড়ায় ধানের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এরই মধ্যে সরকারকে ধানের দামে কৃষক যেন লাভবান হতে পারে এমন দাম নির্ধারণের কথা জানানো হয়েছিল। কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য না পেলে উৎপাদনবিমুখ হয়ে পড়বে। গত কয়েক বছর সরকারি গুদামে ধান তেমন সংগ্রহ হয়নি। অন্যদিকে সরকারের সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় গত তিন মৌসুম ধরে অনেকটা লোকসানে চাল দিয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন চালকল মালিকেরা।