নিউজ ডেস্ক : বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় নতুন বা প্রতিস্থাপক হিসেবে সব ধরনের যানবাহন ক্রয় (মোটরযান, জলযান, আকাশযান) বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
সেই সঙ্গে আপ্যায়ন ব্যয়, ভ্রমণ ব্যয়, মনিহারি খাতে শুধুমাত্র জরুরি ও অপরিহার্য ক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের ৫০ শতাংশ ব্যয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পেট্রল, ওয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দ অর্থের ৮০ শতাংশ করা যাবে। আর বিদ্যুৎ খাতের বরাদ্দ করা অর্থের ২৫ শতাংশ সাশ্রয় করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি স্বায়াত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর কর্পোরেশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়ের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।
‘মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতাভুক্ত মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন (পরিচালন ও উন্নয়ন) প্রণয়ন’ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা এক পরিপত্রে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান সই করা এ সংক্রান্ত পরিপত্র সব মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সরকারের অগ্রাধিকার খাতের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতায় সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেট সুষ্ঠু ও সময়মতো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন কীভাবে প্রস্তুত করতে হবে তার নীতিমালা বা পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে। এর মধ্যে রয়েছে-
২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে প্রদর্শিত মোট ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে সংকুলানযোগ্য হতে হবে। কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নীতি ও উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনে চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) মূল বাজেটে প্রদর্শিত মোট ব্যয়সীমার মধ্যে সংকুলান সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অপারেশনাল ইউনিট অথবা আইটেম/অর্থনৈতিক কোডের বরাদ্দ হ্রাস/বৃদ্ধি করতে পারবে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত ব্যয়ের প্রাক্কলন প্ৰণয়নকালে অনুমোদিত মূল বাজেটে প্রদর্শিত মোট উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে, ওই অব্যয়িত অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
অর্থ বিভাগ কর্তৃক জারি করা পরিপত্র (নং ০১; তারিখ: ০৩.০৭.২০২২) অনুযায়ী বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবন্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় নতুন প্রতিস্থাপক হিসেবে সব প্রকার যানবাহন ক্রয় (‘৪১১২১০১ মোটরযান’, ‘৪১১২১০২-জলযান’, ‘৪১১২১০৩-আকাশযান’) বন্ধ থাকবে। এ খাতে বরাদ্দ করা অর্থ অন্য কোনো খাতে কোনোভাবেই স্থানান্তর করা যাবে না।
অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্র (নং ০১; তারিখ: ০৩.০৭.২০২২) অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে ‘৩২১১১০৬- আপ্যায়ন ব্যয়’, ‘৩২৪৪১০১ ভ্রমণ ব্যয়’, ‘৩২৫৫১০৫-অন্যান্য মনিহারি, খাতে বরাদ্দ করা অর্থে শুধুমাত্র জরুরি ও অপরিহার্য ক্ষেত্র বিবেচনায় বরাদ্দ দেয়া অর্থের ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। সেই সঙ্গে এ খাতের অব্যয়িত অর্থ অন্য খাতে কোনোক্রমেই স্থানান্তর করা যাবে না।
অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্র (নং ১৬; তারিখ: ২১.০৭.২০২২) অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে ‘৩২৪৩১০১- পেট্রল, ওয়েল ও লুব্রিকেন্ট’ এবং ‘৩২৪৩১০২ গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে এবং বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের ২৫ শতাংশ সাশ্রয় করতে হবে। এসব খাতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ অন্য কোনো খাতে পুনঃউপযোজন করা যাবে না।
অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা পত্র (নং ১৩৯; তারিখ: ০৯.১১.২০২২) অনুযায়ী পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর/পরিদপ্তর/দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর কর্পোরেশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সব প্রকার বিদেশ ভ্রমণ পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর কর্পোরেশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর নিজস্ব অর্থায়নেও সকল প্রকার বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।
অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্র (নং ১৬৮; তারিখ: ১৩.১২.২০২২) অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবন্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন বাজেটের অধীন ‘8181101- ভূমি অধিগ্রহণ’ ও ‘যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি (‘৪১১২২০২-কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক’, ‘৪১১২৩০৩-বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি’, ‘৪১১২৩১৪-আসবাবপত্র ও ‘৪১১২৩১৬-অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি) খাতের ব্যয় স্থগিত থাকবে।
এছাড়া পরিচালন বাজেটের অধীন ভবন ও স্থাপনাসমূহ (‘৪১১১১০১ আবাসিক ভবন’, ‘৪১১১২০১ অনাবাসিক ভবন’, ‘৪১১১৩১৭- অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা’) খাতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের বিপরীতে নতুনভাবে কার্যাদেশ প্রদান করা যাবে না এবং ইতোমধ্যে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে কেবলমাত্র এরূপ ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যয় করা যাবে না। এসব খাতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ অন্য কোনো খাতে এবং অন্য কোনো খাত থেকে এসব খাতে পুনঃউপযোজন করা যাবে না।