দেশের উন্নয়নে জুয়েলারি খাতের বিকল্প নেই: সায়েম সোবহান আনভীর

নিউজ ডেস্ক : দেশের উন্নয়নে জুয়েলারি খাতের বিকল্প নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর বলেছেন, আমার কাজ ছিল জুয়েলারি খাত গুছিয়ে আনার, সেটা করেছি। এখন এই শিল্পকে ধরে রেখে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ সারা দেশের ৪০ হাজার জুয়েলারি ব্যবসায়ীর।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই যে বড় বড় উন্নয়ন হচ্ছে, আরও উন্নয়ন পরিকল্পনা হচ্ছে, এগুলো একটা সময় আমার কাছে স্বপ্ন মনে হতো। কিন্তু আমার এখন অনেক সাহস হয়ে গেছে। আমি এখন বাংলাদেশে যে কোনো মেগা শিল্পকারখানা করার জন্য প্রস্তুত। কারণ আমার এই শক্তির যোগান দিচ্ছে সরকার। এই সরকার গত ১৪ বছরে দেশের উন্নয়নে মিরাকল ঘটিয়েছে, যা বিশ্ব প্রতিযোগিতায় অবিশ্বাস্য রোলমডেল। আমি আজকে বাংলাদেশি হিসেবে গর্ব বোধ করি।

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত ‘বাজুস সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা-২০২২’-এ সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করি। আমার অনুপ্রেরণা ইতিবাচকতা, উৎপাদনশীলতা ও অগ্রগতি। আর ভালো কাজে বাধা আসবে, এটাই স্বাভাবিক। ভালো কাজ করতে কষ্ট হবেই। এটার সুফল অনেক বড় এবং স্থায়ী। যে কোনো জিনিসই প্যারেন্ট থেকে শুরু ফ্ল্যাটলাইন থেকে শুরু। তো আমি মনে করি বাজুস আমি ফ্ল্যাটলাইন থেকে শুরু করেছি। আই উইল গো স্টেপ বাই স্টেপ নাও। একটা একটা করে ফ্লোর বানিয়ে যাবো। এটাই আমার অনুপ্রেরণা, এটাই আমার উৎসাহ, এটাই আমার চিন্তা, এটাই আমার ধারণা এবং আমি এটাই করব। এই কাজ করার জন্য যা যা করার দরকার, যে যে জায়গায় যাওয়া দরকার, আমি তাই করব। এই শিল্পকে শুধু বাংলাদেশ না, সারা দুনিয়াতেই নিয়ে যাবো আমি। সবার কাছে বলবো বাংলাদেশে আসুন।

বাজুস প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আমি বাংলাদেশ, আপনি বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারে আমরা আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, এজন্য নিজেদের গর্ব বোধ করা উচিত। এখন সব জায়গায় কোনো কিছু কিনতে গেলে ‘মেড ইন চায়না’ দেখা যায়। এখন কিন্তু জায়গায় জায়গায় ‘মেড ইন বাংলাদেশও’ দেখা যায়। আর কিছু না হলেও বাংলাদেশি পোশাক পণ্য দেখা যায়। আমি চাই আগামী দিনে বাংলাদেশি জুয়েলারি খাতের নামও বিশ্বের বুকে থাকুক। এটা আমাদের সোনার বাংলাদেশ, সোনা দিয়েই গড়তে হবে। তামা দিয়ে হবে না। আমরা তামা-সিলভার না। আমরা সোনার বাংলাদেশ। আমার যে জুয়েলারি কারখানা হচ্ছে, সেখানে প্রায় ১২ হাজার ভরি উৎপাদন করবো। প্রাথমিকভাবে ৬ হাজার শ্রমিক কাজ করবে। আমি ৫ বছরের যে রোডম্যাপ করেছি, সেখানে প্রায় ৩০ হাজার ভরি পর্যন্ত গহনা তৈরি করবো। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোক আমার কারখানায় কাজ করবেন। আমার মতো যদি আরও ১০টা উদ্যোক্তা আসেন, এই জুয়েলারি শিল্প বাংলাদেশকে উজ্জ্বল করবে। ধীরে ধীরে এই শিল্প অন্য শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে।

সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, জাপানে কিন্তু কোনো কাঁচামাল নেই। আমরাও একই অবস্থানে। আমাদের কোনো কাঁচামাল নেই। তাহলে জাপান কী করছে। কাঁচামাল আমদানি করে রূপান্তরের পর উচ্চ মূল্যে তারা রপ্তানি করছে। এটাই ব্যবসার থিম। আমাদের একই থিম অনুসরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমার খুব কষ্ট লাগে, যখন আমি দেখি আমাদের দেশের লোকজন বিদেশ থেকে গহনা কেনে। কিন্তু দেখুন বাংলাদেশের কারিগর বিশ্বসেরা। বাংলাদেশে একটা ভালো ডিজাইন ইনস্টিটিউট নেই। ইনস্টিটিউট নিয়ে আমার অনেক বড় স্বপ্ন আছে। আমাদের চারুকলা ইনস্টিটিউট আছে। আমার চিন্তায় আছে ডিজাইন স্টুডিও গড়ে তোলার। ভোকেশনাল সেন্টার নিয়েও ভাবছি। এগুলো যদি যুক্ত করে, সবকিছু যদি একটা ছাতার নিচে আনা যায়, তাহলে এই শিল্পে বিপ্লব ঘটবে।

বাজুস সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার মনোমুগ্ধকর বর্ণিল আয়োজনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন দেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ও বাজুস অ্যাম্বাসেডর মমতাজ বেগম। তিনি বাজুসের থিম সং ‘নারী হয় অন্যন্যা রূপের অংহকারে/ সেই রূপ অপরূপ সোনার অলঙ্কারে’ শীর্ষক গানসহ একে একে তার জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করেন। বাজুসের থিম সংটি লিখেছেন খ্যাতনামা গীতিকার কবির বকুল। সুর করেছেন ক্লোজআপ ওয়ান তারকা কিশোর দাস।

অনুষ্ঠানে রাজধানী ঢাকার সকল বাজুস সদস্যসহ সারা দেশের জেলা শাখা সমূহের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা শাখার সভাপতিসহ প্রায় দেড় হাজার জুয়েলারি ব্যবসায়ী অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়।

এর আগে দুপুরে সারা দেশের জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা বাজুস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার বাসভবনে আয়োজিত মতবিনিময় সভা অংশ নেন। ওই সভায় সাংগঠনিক দিক-নিদের্শনামূলক বক্তব্য দেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর।

এছাড়াও আইসিসিবিতে বিকেলে জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে জাতীয় প্রতিনিধি সভা-২০২২ অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সারা দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ী নেতাদের কাছে বিভিন্ন কর্ম-পরিকল্পনা ও সাংগঠনিক কর্ম-পরিধি তুলে ধরেন বাজুসের সাবেক সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায় ও এনামুল হক খান দোলন, সহ-সভাপতি গুলজার আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, এম এ হান্নান আজাদ, বাদল চন্দ্র রায়, ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন, সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়াল প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিজয় দিবস উপলক্ষে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে আলোচনা সভা
পরবর্তী নিবন্ধশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংকের আলোচনা সভা