শেয়ারবাজারের ওপর আস্থা হারানোর সুযোগ নেই: বিএসইসি কমিশনার

নিউজ ডেস্ক : সুচিন্তিতভাবে বিনিয়োগ করলে শেয়ারবাজার থেকে রিটার্ন পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের ওপর আস্থা হারানোর কোনো সুযোগ নেই। বিনিয়োগের বিপরীতে যে বিনিময় দেওয়ার কথা, এই বাজারের সেই সক্ষমতা রয়েছে।

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) ‘অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো-২০২৩’ এর দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। ‘বিনিয়োগ শিক্ষা ও পুঁজিবাজার’ শিরোনামের এই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।

শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের অর্থনীতি অনেক ভালো করছে। আজকের পত্রিকায়ও খবর এসেছে, বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। তৈরি পোশাকশিল্পে নতুন করে ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের খবর এসেছে। আস্থা না থাকলে তা হতো না। কোনো রিসোর্টে যেতে চাইলে খালি পাওয়া যায় না। অনাস্থা থাকলে এমন হবার কথা নয়। তারপরও শেয়ারবাজারে যে কিছু অনাস্থার কথা হয়, সেটি দূর করার জন্য প্রয়োজন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও দায়িত্বশীল বিনিয়োগ শিক্ষা।

তিনি বলেন, বিনিয়োগ শিক্ষাকে অর্থায়ন শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এই শিক্ষার চাহিদা এবং ধরন বয়স ও সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে। সশরীরে উপস্থিত হয়ে এই শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ কমে আসছে। তাই এই শিক্ষাকে হাইব্রিড পদ্ধতিতে নিয়ে যাওয়া বেশ জরুরি। ফিজিক্যাল শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

বিএসইসির এ কমিশনার আরও বলেন, বিশ্লেষণ ও জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করতে চাইলে আর্থিক তথ্য জানা বেশ জরুরি। তাই সাধারণ তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে এখনও বেশ কিছু ঘাটতি আছে। এমনকি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটেও প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য পাওয়া যায় না। সেখানে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য আপলোড করা নেই।

তিনি বলেন, বিনিয়োগ শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক গ্যাপ রয়েছে। তবে আস্থার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি নেই। অভাব ও আস্থার ঘাটতি থাকলে বর্তমানে অনেক বিনিয়োগ আসতো না। ব্যাংকগুলোতেও এখন নতুন নতুন প্রজেক্টের অফার আসে। সবাই একসঙ্গে কাজ কাজ করলে দেশের শেয়ারবাজার ও অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।

ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই শিক্ষার পদ্ধতি সঠিকভাবে এগিয়ে দেওয়া উচিত। তাদের শেয়ারবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। করোনার সময় স্কুল-কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইন হয়েছিল। সেরকমভাবে বিনিয়োগ শিক্ষাকেও অনলাইন করানো উচিত। এছাড়া তথ্যের প্রবাহ বাড়াতে হবে।

অর্থসূচকের উদ্যোগে চলমান তিনদিনব্যাপী ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোতে আজ বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম) এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে সেশন চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেন বিএএসএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী।

সেমিনারে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এম সাদেকুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম)-এর ফ্যাকাল্টি রিজভী আহমেদ। এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, গ্রিন ডেল্টা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াফী শফিক মিনহাজ খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।

মূল প্রবন্ধে বিএএসএমের ফ্যাকাল্টি রিজভী আহমেদ বলেন, বিনিয়োগ শিক্ষা নিয়ে যারা চিন্তা করেছে তারাই লাভবান হয়েছে। অতীতে শেয়ারবাজার ধসের মূল কারণ ছিল বিনিয়োগ শিক্ষার অভাব। মূল্যষ্ফীতিসহ অন্যান্য বিষয়ের প্রভাব শেয়ারবাজারে কীভাবে পড়ে সেটাও জানতে হবে। বিনিয়োগ শিক্ষার অনেক উপকারিতা রয়েছে। মূল্যস্ফীতি হলে শেয়ারবাজারে কী ধরনের প্রভাব পড়ে এ বিষয়ে জানতে হবে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগ শিক্ষা নিয়ে জানাশোনা লোকজনই শেয়ারবাজারে আসে। যে সব দেশের মানুষ গণিতে ভালো তারা বিনিয়োগ শিক্ষা বেশি বুঝে। জমানো সব টাকা দিয়ে শেয়ার কেনা উচিত না। প্রতি মাসে অল্প করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত। এভাবে বিনিয়োগ করলে সেই শিক্ষা শেয়ারবাজারে কাজে লাগানো যাবে।

প্যানেল আলোচনায় বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের অনেকেরই আর্থিক বিষয়ে ভালো ধারণা আছে। অনেকেই বিবিএ, এমবিএ ডিগ্রি নিয়েছেন। কিন্তু তাদের আচরণ যৌক্তিক বা স্বাভাবিক নয়। তারা যখন ব্যক্তিগত সম্পদ ব্যবস্থাপনা করছেন, তখন কেন যেন সেসব জানা বিষয় ভুলে যাচ্ছেন। বিশেষ করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মৌলিক বিষয়গুলোকে বিবেচনায় না নিয়ে কোনো একটা বড় গ্রুপকে অনুসরণ করছেন। বড় বিনিয়োগকারীদের অনুসরণ করছেন। অনেকটা ভেড়ার পালের মতো করে ছুটছেন।

তিনি বলেন, বিনিয়োগের সঙ্গে যে ঝুঁকির বিষয় আছে সেটি ভুলে যাচ্ছি। আমরা আইটেম খুঁজছি। বিভিন্ন জনের কাছে জানতে চাই- এখন আইটেম কী আছে। আমরা গুজবে বিশ্বাস করে বিনিয়োগ করছি। শোনা গেছে, অমুক কোম্পানির শেয়ার ১০০ টাকা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে ৫০০ টাকা হয়ে যাবে। কোনোকিছু চিন্তা না করেই ওই শেয়ার কিনে বিপদে পড়ছি। দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করছি, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩০০ কোটি টাকার উপরে
পরবর্তী নিবন্ধখুলনায় পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা