ব্যাংকের ৫০ ভাগ শাখা করতে হবে পল্লীতে

নিউজ ডেস্ক : ব্যাংকগুলোর নতুন শাখা বা ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন, ভাড়া বা ইজারা সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একটি ব্যাংকের মোট অনুমোদিত শাখার ৫০ শতাংশ পল্লীতে হতে হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবসার প্রসার, ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগণের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া ও অধিকতর আর্থিক সেবাভুক্তির লক্ষ্যে দেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকগুলোর ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন, স্থানান্তর ও ভাড়াচুক্তি নবায়ন এবং সান্ধ্য ব্যাংকিংয়ের বিদ্যমান নীতিমালা জারি করেছে।

নতুন শাখা স্থাপন: বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদনের জন্য যে বছরে নতুন শাখা ও উপশাখা স্থাপন করা হবে তার পূর্ববর্তী বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে আবেদন দাখিল করতে হবে। ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা, ঋণের মান, শাখা ব্যবস্থাপনা, আমানতকারীদের সেবা প্রদানসহ সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত সংখ্যক শাখা স্থাপনের নীতিগত অনুমোদন দেবে। অনুমতিপ্রাপ্ত শাখা নির্ধারিত সময়কালের মধ্যে স্থাপন করা না হলে উক্ত অনুমতিপত্র বাতিল করা হবে। পল্লী শাখার সংখ্যা হবে নীতিগত অনুমোদনপ্রাপ্ত মোট শাখার অন্যূন ৫০ শতাংশ। বছরে প্রতিটি শহরে একটির বেশি শাখা স্থাপন করা যাবে না।

উপশাখা: ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত এলাকার জনসাধারণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনুমোদনপ্রাপ্ত মোট উপশাখার অন্যূন ৬০ শতাংশ সিটি কর্পোরেশন ও ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত পৌরসভা এলাকার বাইরে স্থাপন করতে হবে। উপশাখা নিকটস্থ পূর্ণাঙ্গ শাখার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে। উপশাখার মূল অনুমতিপত্র, ব্যাংকের নাম, নিয়ন্ত্রণকারী শাখার নাম এবং ব্যাংক প্রদত্ত উপশাখাযুক্ত নামের সাইনবোর্ড উপশাখার বাইরে সহজে দৃশ্যমান হয় এমন স্থানে স্থাপন করতে হবে। নিয়ন্ত্রণকারী শাখা থেকে ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে উপশাখা স্থাপন করা যাবে না। তবে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় কোনো বিশেষ জনগোষ্ঠী বা বিশেষ অঞ্চল বা এলাকায় উপশাখা স্থাপনের আবশ্যকতা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ বিবেচনায় এ শর্ত থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে। উপশাখার ফ্লোর স্পেস হবে সর্বোচ্চ ১ হাজার বর্গফুট। উপশাখার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ন্যূনতম ২ জন কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। নগদ অর্থ ও গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস উপশাখায় সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভল্ট স্থাপন করা যাবে। উপশাখায় বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম সম্পাদন করা যাবে না বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।

এসএমই বা কৃষি শাখা বিভাগীয় শহর বা সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে স্থাপন করতে হবে এবং ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত এলাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এসএমই বা কৃষি শাখায় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ব্যতীত অন্যান্য সকল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। এসব শাখায় জমাকৃত আমানতের অন্যূন ৫০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট শাখার আওতাধীন এলাকার এসএমই বা কৃষি খাতে ঋণ দিতে হবে বা বিনিয়োগ করতে হবে।

বুথ স্থাপন: বুথ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। কালেকশন বুথে শুধু সরকারি রাজস্ব আদায়, ইউটিলিটি বিল সংগ্রহ, ডিমান্ড নোট ফি, হাসপাতালের বিভিন্ন বিল, শিক্ষার্থীদের টিউশন ও অন্যান্য ফি, স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার ফি জমা নেওয়া যাবে।

ব্যাংকের যেকোনো ধরনের ব্যবসায় উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। এসব কেন্দ্রে কোনো প্রকার ব্যাংকিং লেনদেন করা যাবে না। ব্যবসা কেন্দ্র স্থানান্তরের আবশ্যকতা দেখা দিলে অনুমতিপত্রপ্রাপ্তির তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে স্থানান্তর করতে হবে, অন্যথায় অনুমতিপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।

শাখা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে স্থানান্তরের ১৫ দিনের মধ্যে শাখার মূল অনুমতিপত্র ফেরতপূর্বক সংশোধনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হবে।

স্থাপনা ভাড়া/ইজারা: দীর্ঘমেয়াদে চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে ব্যয় সাশ্রয়ী ও অন্যান্য সুবিধাদি বিবেচনায় অনধিক ২০ বছর মেয়াদে ভবন বা ফ্লোর স্পেস ভাড়া বা ইজারা গ্রহণ করা যাবে। একই ভাড়াচুক্তির মেয়াদে একবারের অধিক অগ্রিম দেওয়া যাবে না। ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পাশাপাশি সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থাপনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর ব্যয়ের নির্বাহের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাহী কমিটির অনুমোদন থাকতে হবে।

ব্যাংকের যেকোনো ধরনের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভবন বা ফ্লোর স্পেস ভাড়া বা ইজারা গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে ভবনের বিধিবন্ধ অনুমোদন গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, ব্যাংকের নিজস্ব প্রকৌশলী দ্বারা ভবনের কাঠামোগত শক্তি নিরুপণসহ তাৎক্ষণিক দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সেখানে প্রয়োজনীয় পূর্বপ্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে।

সান্ধ্য ব্যাংকিং: অফিস সময়ের পর সান্ধ্য ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। সান্ধ্য ব্যাংকিং সময়সূচি ব্যাংকের অফিস সময়ের পর ২ ঘণ্টা হবে এবং এ সময়ে জমা গ্রহণ ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার ব্যাংকিং লেনদেন করা যাবে না।

ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব তহবিল তৈরির পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ফের শীর্ষে ঢাকা