নিউজ ডেস্ক : নতুন বছর ২০২৩ সালের প্রথম দিনটি ভালো গেলো না শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের। মূল্যসূচকের পতনের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের দেখতে হলো লেনদেন খরা। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আড়াই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে।
বছরের শুরুর দিন এমন মন্দাভাব দেখা গেলেও বিদায় নেওয়া ২০২২ সালের শেষ দুই কার্যদিবস টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল শেয়ারবাজার। ফলে নতুন বছরের শুরুতে ভালো শেয়ারবাজারের দেখা মিলবে এমন প্রত্যাশায় ছিলেন বিনিয়োগকারী। কিন্তু বছরের প্রথম দিনেই হতাশ হতে হলো বিনিয়োগকারীদের।
নতুন বছরের প্রথম কার্যদিবস রোববার (১ জানুয়ারি) ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
লেনদেনের শুরুতে এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও তা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। বরং লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়েছে দরপতনের তালিকা। এতে সবকটি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ১৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৯টির। আর ১৬২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এরপরও ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৯৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৭৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩৪৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৬৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
লেনদেন শুধু আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেনি, ২০২০ সালের ৭ জুলাইয়ের পর ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন হলো। ২০২০ সালের ৭ জুলাই ডিএসইতে ১৩৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর ডিএসইতে আর এত কম লেনদেন হয়নি।
এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০২২ সাল শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই খারাপ গেছে। তবে বছরের শেষ দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এতে ভেবেছিলাম ২০২৩ সালের শুরুতে বাজার ভালো হবে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। ঘুরে ফিরে সেই পতনই দেখতে হলো।
তিনি বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা খুব সমস্যায় আছে। গত এক বছরে শেয়ারবাজার থেকে লাভ করা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই লোকসান করেছেন। এখন দিন যত যাচ্ছে লোকসানের পাল্লায় ভারী হচ্ছে।
এদিকে লেনদেন খরার দিনে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৮ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের ১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বসুন্ধরা পেপার।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, বেঙ্গল উইন্ডোজ থার্মাল প্লাস্টিক, মুন্নু সিরামিক, জেনেক্স ইনফোসিস, আমরা নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ও ইস্টার্ন হাউজিং।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৪০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৪টির ও ৮৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বছরের প্রথম দিনেই মন্দা দেখা গেলেও ২০২৩ সালে শেয়ারবাজার ভালো হবে বলে আশা করেছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান।
সম্প্রতি তিনি বলেন, আগামী বছর (২০২৩ সাল) এ বছরের (২০২২ সাল) থেকে ভালো হবে। এ বছর সব ধরনের নেতিবাচক একটি ভিটি গেলো। কোভিডের পর যুদ্ধ, যুদ্ধের পর ডলার সংকট। সবকিছুই নেতিবাচক। আশা করি, আগামী বছর ভালো হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে, রপ্তানি বাড়ছে। সে হিসাবে আগামী বছর অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকবে। আশা করি পুঁজিবাজারও ভালো থাকবে।