নিউজ ডেস্ক : প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় করপোরেট কোম্পানি আরও বড় হচ্ছে, আর প্রান্তিক খামারি দিন দিন ন্যায্য মূল্য না পেয়ে লস করে খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য পোল্ট্রি স্ট্রোক হোল্ডারদেরকে নিয়ে ২০১০ সালে একটি জাতীয় কমিটি করে।
পোল্ট্রি ফিড, মুরগির বাচ্চা, ডিম ও মুরগির কৌশলপত্র তৈরি করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) প্রান্তিক খামারিদের ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ তুলে ধরতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রান্তিক খামারিদের একটি ডিম উৎপাদন খরচ ১১ দশমিক ১১ পয়সা, এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪৮ টাকা ও এক কেজি সোনালী মুরগির উৎপাদন খরচ ২৬২ টাকা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শেখ হাসিনার নির্দেশ খুদা হবে নিরুদ্দেশ। ১৬ কোটি মানুষের প্রোটিনের যোগানদাতা পোল্ট্রি খামারিরা আজ কেন খামার বন্ধ করে দিচ্ছে জানতে চাই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে। নিঃস্ব হয়েছেন ডিম-মুরগি উৎপাদনকারী প্রান্তিক বেকার যুবক ও নারী উদ্যোক্তারা।
সরকার করপোরেটদের সব সুযোগ-সুবিধা দিলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা অবহেলিত কেন? এমন প্রশ্ন করে বলা হয়, প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন ধরে রাখতে হবে, তা না হলে করপোরেটদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে ভোক্তা ও খামারিরা। এ শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান জড়িত আছে। এ শিল্প যদি ধ্বংস হয়ে যায় বেকারত্ব বেড়ে যাবে এবং ডিম ও মুরগির সংকট দেখা দেবে। তাই তাদের যেভাবে হোক টিকিয়ে রাখতে হবে। তারা জিম্মি হয়ে আছে গুটিকয়েক করপোরেট কোম্পানির কাছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর শিল্প পোল্ট্রি শিল্প। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বে অবহেলায় প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
সম্মেলনে আরও বলা হয়, কোম্পানিগুলো পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে। তাই কোম্পানিগুলোর কাছে দেশের বৃহত্তর পোল্ট্রি শিল্প জিম্মি হয়ে পড়ছে। কিন্তু ডিম ও মুরগি ৯০ শতাংশই উৎপাদন করেন প্রান্তিক খামারিরা। করপোরেট কোম্পানিগুলো চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ উৎপাদন করে কৌশলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অনুমতি থাকলেও তারা কোনো কোম্পানিতে তদারকি বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন না।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন প্রান্তিক খামারিরা। সেগুলো হলো- ২০০৮ পোল্ট্রি নীতিমালা ও ২০১০ পোল্ট্রি ফিড, ২০১৩ এবং ২০২০ যতগুলো নীতিমালা আছে সবগুলো বাস্তবায়ন করে পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষা করতে হবে। কোনো অজানা কারণে পোল্ট্রি নীতিমালা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সব খামারিকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে সরকারি সব সুবিধা দিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার ব্যবস্থাপনার পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সব প্রান্তিক খামারি উৎপাদন খরচের সঙ্গে সমন্বয় করে বিক্রি করতে পারেন। সরকারের পক্ষ থেকে সব পোল্ট্রি খামারিদের জন্য সব ব্যাংকে জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে শিল্প টিকানো সম্ভব। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে যায়। তাই সরকারের পক্ষ থেকে মুরগির খাদ্যে প্রান্তিক খামারিদের ভর্তুকি দিয়ে দাম কমিয়ে রাখা সম্ভব। এছাড়া কোনো প্রকারেই সম্ভব না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার। আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসাইন ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মনসুর রহমান।