নিউজ ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীরা তিন খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনেক সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বিমান, শিক্ষা ও আর্থিক খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীরা।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সংস্কার: বিনিয়োগ জলবায়ু তহবিল (বিআইসিএফ) প্রোগ্রামের শেষ মেয়াদী মূল্যায়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিতি ছিলেন, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান, এফসিডিও বাংলাদেশের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ডানকান ওভারফিল্ড , বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের আইএফসি কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হোল্টম্যান, ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বারস অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআসিসিআই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) সিইও ফেরদাউস আরা বেগম।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা), যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি এবং করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়। বাণিজ্য বহুমূখিকরণের জন্য শুধ আরএমজি সেক্টর না সব সেক্টরকে সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন আলোচকরা।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, নাথানের হেড অফ গ্লোবাল প্র্যাকটিস বুদ্ধিকা সমরাসিংহে। মূলপ্রবন্ধে সমরাসিংহে বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি তুলে ধরে কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ পরিবেশ অনেক উন্নতি করেছে। বিনিয়োগ বাড়াতে সরাসরি সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে ফাইন্যান্সিয়াল রেগুলেটরি সাপোর্ট এবং রপ্তানী বহুমুখীকরণে গুরুত্ব দিতে হবে।
লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, শুধু আরএমজি সেক্টর না সব সেক্টরে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকার এমব সেক্টরকে প্রমোট করতে সহায়তা করছে। একই সঙ্গে ব্যবসা সহজ করা হচ্ছে। এজন্য ওয়ান স্টফ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে সব ধরনের ব্যবসায়িক সুবিধা ওয়ান স্টফ সার্ভিসের মাধ্যমে এক জায়গায় পাওয়া যাবে।
হাফিজুর রহমান বলেন, রপ্তানী বহুমূখীকরণ এবং বিদেশি বিনিয়োগের প্রতি সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। এজন্য ব্যবসা সহজীকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষিত করতে কাজ করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন বলেন, বাংলাদেশে বিমান খাতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এটা যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীরা কাজে লাগাতে চায়। তারা বাংলাদেশের বিমান খাতর উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে চায়। যুক্তরাজ্যের এয়ারবাস বাংলাদেশে বিমান খাতের উন্নয়নে আগ্রহী বলেও জানান তিনি।
শিক্ষা খাতে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিনিয়োগে আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজারে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে মানসম্মত শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বের শ্রেষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো অন্যতম। তারা তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করতে চায়। এছাড়া আর্থিক খাতেও যুক্তরাজ্যের আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে বিমা খাতে বিনিয়োগ করতে চায় তারা। বাংলাদেশ এমন একটি পরিবেশ যেখানে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো ব্যবসা করতে পারে বলেও জানান তিনি।
মার্টিন হোল্টম্যান বলেন, রেডিমেট গার্মেন্টসসহ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালো করছে। ব্যবসায়ীক পরিবেশ আরও উন্নতি করতে আইএফসির সহায়তা অব্যাহত থাকবে। বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে ভালো পরিবেশ রয়েছে উল্লেখ করে বিনিয়োগ করতে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্ববান জানান তিনি।
নাসের এজাজ বিজয় বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে এনবিআরকে ডিজিটাল করতে হবে। ব্যবসায়িক নিবন্ধন সহজীকরণ করতে হবে। কারণ ব্যবসা করতে গেলে বিভিন্ন ধরণের নিবন্ধন প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে জঠিলতা থাকলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহ পায় না। এছাড়া, ব্যবসায়ীদের লজিস্টিক এবং ইউটিলিটি বাড়াতে হবে।
বিল্ডের সিইও ফেরদাউস আরা বেগম বলেন, বাংলাদেশে এখনো আরএমজি সেক্টর ছাড়া অন্য সেক্টরগুলো সরকারি সুযোগ সুবিধা কম পায়। বিনিয়োগ বাড়াতে আরএমজির পাশাপাশি অন্য সেক্টরগুলোকে সমানভাবে ব্যবসায়িক সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। এছাড়া পাব্লিক প্রাইভেট ডায়ালগ বাড়াতে হবে। যদিও এটা কিছুটা কঠিন তবুও এটা বাড়াতে হবে। কীভাবে প্রাইভেট সেক্টর কাজ করবে, তাদের সুযোগ সুবিধার বিষয়ে নিয়োমিত আলোচনার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
সমাপতি বক্তব্যে আইএফসির রিজিওনাল উপদেষ্টা ম্যানেজার সেলমা রাসাভাক বলেন, বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নতির লক্ষ্য অর্জনে আইএফসি সহায়তা করছে। ভবিষ্যতেও সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিআইসিএফ কার্যক্রম দুটি ধাপে বাস্তবায়িত হয়। বিআইসিএফ-১ এর সময়কাল ছিল ২০০৭ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত এবং বিআইসিএফ-২ ছিল ২০১৬ থেকে ২০২২। উভয় পর্যায় বাস্তবায়নে দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। অনুষ্ঠানে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তা, দাতা সংস্থার সদস্য, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, এনজিও এবং সুশীল সমাজের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।