নিউজ ডেস্ক : ওষুধ আইন ২০২৩’র খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর আওতায় ওষুধের লাইসেন্সহীন উৎপাদনে ১০ বছর সাজা; মজুদ কিংবা ভেজাল করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আগে আইনটি ছিল ওষুধ নিয়ে। এই আইনে কসমেটিক্সকে ফোকাস করা হয়েছে। আইনের আওতায় কিছু কিছু ওষুধের দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, বর্তমানে এ বিষয়ে আমাদের দুটি আইন আছে। একটি হলো ‘দ্য ড্রাগস অ্যাক্ট, ১৯৪০’। আরেকটি ‘দ্য ড্রাগস কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২’। এ দুটোকে এক করে এবং এর সঙ্গে আরও নতুন কিছু যুক্ত করে আইনটি করা হয়েছে। এর আগে খসড়া আইনটি ২০২২ সালের ১১ আগস্ট নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সেটি আজকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে আজকে অনুমোদনের ক্ষেত্রে একটু পরিবর্তন এসেছে। আগের আইনগুলোয় শুধুমাত্র ওষুধকে ফোকাস করা হয়েছিল, নতুন খসড়ায় কসমেটিকসকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নতুন এ আইনের নাম হবে ‘ঔষধ ও কসমেটিকস আইন, ২০২৩’। এ নামেই আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
মাহবুব হোসেন আরও বলেন, নতুন আইনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ওষুধের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নতুন ওষুধ, ভ্যাকসিন ও মেডিকেল ডিভাইস ডেভেলপ করা। ট্রায়াল চারটি ধাপে যাতে করা হয় সেটি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ফার্মাকো ভিজিল্যান্স বলে ওষুধ শিল্পে একটা কনসেপ্ট আছে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর দিক পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের সুযোগ নতুন আইনে রাখা হয়েছে। আগের আইনে সেই সুযোগ রাখা হয়নি। এগুলো যদি ক্ষতি হয়, তাৎক্ষণিকভাবে যাতে নিবন্ধন বাতিল করা যায়। ভ্যাকসিনের লটের কোয়ালিটি পরীক্ষায় সুযোগ আগের আইনে ছিল না, নতুন আইনে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটিকে মনিটর করা, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কন্ট্রোল করতে ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ থাকবে। এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহারের বিষয়টি নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিছু জিনিসকে এখানে মেডিকেল ডিভাইস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সেগুলো ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আরও জানান, নতুন আইনের মাধ্যমে কসমেটিকসের উৎপাদন, বিতরণ এবং মজুদ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তাদের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। খসড়া আইনে ৩০টি অপরাধ চিহ্নিত ও সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এজন্য আলাদা আলাদা শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে ওষুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে যাবজ্জীবন পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া যাবে। নকল ওষুধ উৎপাদন, বিক্রি, বিতরণ বা বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শন করলে যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ওষুধ ভেজাল করলে বা ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, বিক্রি ও মজুত করলে এক্ষেত্রেও যাবজ্জীবন শাস্তি পেতে হবে।
এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্সে উল্লেখিত শর্ত না মেনে ওষুধ উৎপাদন করলে; নিবন্ধন ছাড়া ওষুধ উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, বিক্রি, বিতরণ, প্রদর্শন করলে; সরকারি ওষুধ বিক্রি বা বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুত বা প্রদর্শন করলে; লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্সের শর্ত না মেনে ওষুধ আমদানি করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড হতে পারে।
ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ (প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি করা যাবে যে ওষুধ) ছাড়া রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ বিক্রি করা হলে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার কথা প্রস্তাব করা হয়েছে আইনে। ওষুধ কোনটা কোনটা ওভার দ্য কাউন্টার বিক্রি করা যাবে সেটা বলা থাকবে। কসমেটিকস নিয়ে তিনি বলেন, কসমেটিকস বিক্রি, আমদানি ও উৎপাদন করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর লাইসেন্স অথরিটি হিসেবে কাজ করবে। এখন যারা কসমেটিকসের ব্যবসা বা উৎপাদন করছেন তাদের লাইসেন্স নিতে হবে। এজন্য ওষুধ প্রশাসন বিধি প্রণয়ন করবে।
ওষুধের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্যর যে গাইডলাইন্স আছে সেটি যাতে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হয়, সে বিষয়ে খুব জোর দেওয়া হয়েছে। এটা প্রতিপালন বাধ্যতামূলক করা হবে। এটা সংসদে পাস হওয়ার সাথে সাথেই কার্যকর হবে। আইনটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অনুমোদনের পর সংসদে পাস হবে বলেও তিনি জানান।
এর আগে ২০২২ সালের আগস্টে ভেজাল ও লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ উৎপাদন করলে ১০ বছরের জেল বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে ‘ওষুধ আইন, ২০২২’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছিলেন, খসড়া আইনটিতে ওষুধ প্রশাসন কেমন হবে, ওষুধ বিক্রি ও আমদানির লাইসেন্স দেওয়ার নিয়ম উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে তার শাস্তি কী হবে, সেটাও খসড়া আইনে ছিল।