নিউজ ডেস্ক : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আনিত রেজুলেশন নিয়ে ভোটাভুটিতে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলো বাংলাদেশ। এই ‘অ্যাবস্টেনশান’ ভোটের জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে রাশিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রত্যাশা, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রত্যাশা, ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ পশ্চিমাদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। এমন প্রেক্ষাপটে গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান না নিয়ে ‘অ্যাবস্টেনশান’ ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ।
এ কারণে এক টুইট বার্তায় রাশিয়া দূতাবাস বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ ৩২টি দেশ ‘অ্যাবস্টেনশান’ ভোট দিয়ে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্বিতীয় বছরে গড়ানোর প্রাক্কালে গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে উত্থাপিত প্রস্তাবটির মূল বার্তা ছিল রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে ইউক্রেন ছেড়ে যেতে হবে। ১৪১-৭ ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে। রাশিয়া, বেলারুশ, সিরিয়া, নিকারাগুয়া, মালি, ইরিত্রিয়া ও উত্তর কোরিয়া ওই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে রাশিয়ার মিত্র চীন প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান না নিয়ে ‘অ্যাবস্টেনশান’ ভোট দিয়েছে। ভেনিজুয়েলাসহ ১১টি দেশ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেনি।
মিয়ানমার ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। কারণ জাতিসংঘে মিয়ানমারের আসনটিতে জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকারের প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করছেন। মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জাতিসংঘে রাশিয়াকে দায়ী করে যে প্রস্তাবগুলো উঠেছে তাতে সমর্থন করেনি বাংলাদেশ। মানবিক সহায়তাকে গুরুত্ব দিয়ে তুলনামূলক গঠনমূলক একটি প্রস্তাব সমর্থন করে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছিল। এ ছাড়া বরাবরই ‘অ্যাবস্টেনশান’ ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক আছে। চীন, রাশিয়ার সঙ্গেও বাংলাদেশের সুসম্পর্ক। বাংলাদেশ কারো বলয়ে যেতে চায় না। এ নীতিও এখানে প্রতিফলিত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ তার নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করে। আবার একই সঙ্গে প্রতিবেশী বা সমপর্যায়ের দেশগুলো কী অবস্থান নিচ্ছে, সে দিকেও দৃষ্টি রাখে। তবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এসব প্রস্তাব বাধ্যতামূলক নয়।
জাতিসংঘে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রস্তাব নিয়ে ভোটের আগে ও পরে বিভিন্ন দেশ রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে তাদের অবস্থান এবং ভোট দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছে। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, লেসেথোসহ কিছু দেশের প্রতিনিধিরা বলেছেন, এই প্রস্তাব কোনো পক্ষের স্বার্থে কাজে আসবে না।
জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিতা কাম্বুজ ইউক্রেনে বেসামরিক জনগণের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানান। তিনি বলেন, একমাত্র কূটনীতির মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।
চীনের প্রতিনিধিও আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানে জোর দেন। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিনিধিরা ইউক্রেন সংকটের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে বক্তব্য দেন।