নিউজ ডেস্ক : চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এর ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, এ স্থলবন্দর দিয়ে গম, ফল, কসমেটিকস, মরিচ, চাল ও মসলাজাতীয় কোনো পণ্য আমদানি হচ্ছে না। বেশ কিছুদিন ধরে বন্দরের প্রধান আমদানি পণ্য ফলও প্রবেশ করেনি। যে কারণে অলস সময় পার করছেন বন্দরে কর্মরত শ্রমিকরা। অর্ধেকে নেমে এসেছে তাদের রোজগার।
তফিকুল ইসলাম নামে স্থলবন্দরের এক শ্রমিক বলেন, বন্ধর দিয়ে ফলসহ বেশ কয়েক ধরনের পণ্য আমদানি হচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা। সারাদিন বসে থেকে বাড়ি যেতে হয়। কাজ পাই না। অন্য বছরগুলোতে দিনে আয় করেছি ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু কয়েক মাস থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার বেশি আয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, আমি আগে বেশি ফলের গাড়ি লোড করতাম। এখন যেহেতু ফল আসছে না তাই পাথরের গাড়ি লোড করি।
লিটন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, আগে গম, ফল, কসমেটিকস, মরিচ, চাল ও মসলার গাড়ি প্রতিদিন আসতো। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে এসব গাড়ি আর আসে না। তাই আমাদের কাজও কমে গেছে। এখন বেশি পাথর, ভুট্টা, গুঁড়া আসছে। সারাদিনে ৪০০ টাকা আয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সদস্য মেসার্স বুশরা নিহা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী কবিরুল ইসলাম বলেন, আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, শুল্ক ও জরিমানা আদায়, দিনের পর দিন ফাইল আটকে রাখা ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা হয়রানির কারণে আমদানিকারকরা এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য যথাসময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ছাড়ে বিলম্ব হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নানা হয়রানি ও পণ্য খালাসে ধীরগতির কারণে পচনশীল পণ্য ফল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে আমদানিকারকরা। কাস্টমস জটিলতার কারণে যথাসময়ে পণ্য খালাস করা যায় না। এতে অনেক ব্যবসায়ী অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন। কমে যাচ্ছে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ। আর বর্তমান সময়ে এসলি সংকট তো আছেই।
সোনামসজিদ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইসমাইল বলেন, কিছুদিন আগেও ফলসহ পচনশীল সব ধরনের পণ্য আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক ছাড় পেতেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বর্তমানে এ বন্দরে সেই সুবিধা নেই। এলসি সংকট, স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দুই দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বিরাজমান সমস্যার জন্য আমদানি কমেছে। এ কারণে রাজস্ব আহরণও কমেছে। এই স্থলবন্দরে সব থেকে বেশি রাজস্ব আদায় হয় ফলে কিন্তু এলসিসহ বিভিন্ন সংকটে ফল আমদানি হচ্ছে না।
সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের পোর্ট ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন থেকে আগের চেয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বেড়েছে। তবে ফলসহ যে পণ্যগুলোতে বেশি রাজস্ব আহরণ হয় সেগুলো আসছে না। এতে রাজস্ব কমে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কয়েক দফা অফিসে গিয়েও নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি সোনামসজিদ কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মকর্তা।
তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সোনামসজিদ স্থলবন্দরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৯৮ কোটি ৯৯ লাখ ২ হাজার টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩৩৩ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এসময়ে রাজস্ব ঘাটতি ২৬৫ কোটি ১০ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এ বন্দর দিয়ে ফল আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কমেছে।
এর আগে গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরে প্রথম সাত মাসে এ বন্দর দিয়ে ফল আমদানি হয়েছে মাত্র চার হাজার মেট্রিক টন।