নিজস্ব প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ার পাশাপাশি শিল্পকারখানায় তীব্র হচ্ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন দেশের স্টিল, রড ও সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) কার্যালয়ে আয়োজিত আয়রন, কার্বন স্টিল, স্টেইনলেস স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং ইন্ডাস্ট্রি সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির দ্বিতীয় সভায় তারা এ সহায়তা চান।
ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্ববাজারে স্টিলসহ রড ও সিমেন্টের কাঁচামালের দাম বেড়েছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে কারখানাগুলোতে উৎপাদনও প্রায় এক-তৃতীয়াংশে নেমেছে। কম উৎপাদন নিয়ে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে, যা তৈরি করছে ঋণখেলাপির শঙ্কা।
এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা না পেলে দেশের স্টিল, রড ও সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, স্টিল খাত সরাসরি দেশের উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। কোভিড-১৯ মহামারির সময় অনেক উন্নয়নকাজ বন্ধ থাকায় সংকটের মুখে পড়েছে এ শিল্প। তবুও ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে এ শিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। শিল্পায়নসহ দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এ খাতের ঘুরে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহসহ এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ডলার তহবিল গঠনের দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ব্যাপারে সহযোগিতা দিতে ব্যাংকগুলোর প্রতিও আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, অবকাঠামো নির্মাণে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান স্টিল আগে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। পরে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করে দেশে ইন্ডাস্ট্রি চালু করে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন স্টিল তৈরি করছেন। বাংলাদেশের তৈরি স্টিল এখন বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। এজন্য এ খাতের প্রস্তুতকারকদের প্রতি ধন্যবাদ জানান জসিম উদ্দিন।
এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি এম এ মোমেন বলেন, স্টিল খাতে সংকট স্পষ্ট; এ ব্যাপারে দ্বিমতের কিছু নেই। এ খাতের উন্নয়নে জাতীয়ভাবে আলোচনা হওয়া দরকার। স্টিল খাতের ব্র্যান্ডিংয়ে আসন্ন বাংলাদেশ বিজনেস সামিটকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেন তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন। স্টিল খাতকে টিকিয়ে রাখতে ডলার তহবিলের দাবি জানান তিনি।
কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ মো. জামাল উদ্দিন বলেন, বাজারে রড ও সিমেন্টের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে এ খাতের সঙ্গে জড়িত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখতে নির্মাণসামগ্রীর দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এফবিসিসিআই পরিচালক এস এম জাহাঙ্গীর আলম (মানিক) বলেন, ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারাবিশ্বেই স্টিলসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে। কারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুত সংকটের কারণে ওভারহেড কস্ট বেড়েছে। উচ্চমূল্যে কাঁচামাল আমদানি এবং কম উৎপাদনে কর্মীদের বেতন- সবমিলিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ভ্যাট ও ট্যাক্স মওকুফসহ কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ করার দাবি জানান তিনি।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, কমিটির কো-চেয়ারম্যান, মো. শহিদুল্লাহ, ড. সুমন চৌধুরী, ইঞ্জি. শফিকুল হক তালুকদার, ইঞ্জি. বিমল চন্দ্র রায় ও অন্য সদস্যরা।