নিউজ ডেস্ক : টানা দরপতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার আভাস দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের গতিও। সেই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখেয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। অবশ্য এরপরও প্রায় দুইশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের ক্রয়াদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন বেড়ে চারশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মাধ্যমে আট কার্যদিবস পর বাজারে চারশ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের দেখা মিললো। সেই সঙ্গে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে, বেড়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ। ফলে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যাক প্রতিষ্ঠান। ফলে এ বাজারটিতেও বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে টানা দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক বাড়লো।
এর আগে শেয়ারবাজারে টানা পাঁচ কার্যদিবস দরপতন হলে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মতিঝিলে অবস্থিত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আগের কার্যলয়ের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে বিনিয়োগকারীদের একটি দল ব্রোকারেজ হাউজ ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসে এক ঘণ্টার বেশি সময় অবস্থান কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে এ প্রতিবাদ জানান।
এরপর বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১২ দফার একটি স্মারকলিপি দেন। এতে পুঁজিবাজার গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত স্মার্ট পুঁজিবাজার গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে অপ্রদর্শিত আয় বিনা শর্তে ৫ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
এছাড়া স্বল্প সুদে বিনিয়োগকারীদের ঋণ দেওয়ার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি লভ্যাংশের ওপর সম্পূর্ণভাবে ট্যাক্স প্রত্যাহার করা, তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্য ১৫ শতাংশ করার মতো দাবি জানানো হয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা এমন প্রতিবাদ জানানোর পর সোমবার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। আর মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার আভাস পাওয়া যায়।
এদিন লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়ে যায়, যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১০৬টি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৬টির। আর ১৪৬টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে।
এর মধ্যেই দিনের লেনদেনের বেশিরভাগ সময় ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের ক্রয়াদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকে। যার মধ্যে ১৩৫টি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। আর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকে।
এরপরও ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ২১৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ২২০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪২০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৬১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সেই হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৫৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত ১৫ ফেব্রয়ারির পর ডিএসইতে এই প্রথম চারশ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের দেখা মিললো।
টাকার অংকে বাজারটিতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৯ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এডিএন টেলিকমের ২৪ কোটি ছয় লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২১ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শাহিনপুকুর সিরামিকস।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, সোনালী পেপার, আমরা নেটওয়ার্ক, ওরিয়ন ফার্মা, অলেম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং জেমিনি সি ফুড।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে চার কোটি ৭৭ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪০টির এবং ৫১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।