ওয়ালটনে বিশ্ব নারী দিবস উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘আর নয় বৈষম্য সমতায় গড়বো বিশ্ব’ প্রতিপাদ্যে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করেছে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের মাল্টি ন্যাশনাল ব্র্যান্ড ওয়ালটন। দিবসটি উপলক্ষে ওয়ালটনের বিভিন্ন অফিস নান্দনিকভাবে সেজেছিল। ওয়ালটন পরিবারের সদস্যদের মাঝে ছিল উৎসবের আবহ। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানটির নারী সদস্যরা দারুণ আনন্দে দিবসটি উদযাপন করেছেন।

বুধবার (৮ মার্চ) রাজধানীর করপোরেট অফিস, গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্স এবং মিরপুরের ওয়ালটন কমপ্লেক্সে কেক কাটা হয়। ছিল বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও বিশেষ আলোচনা সভা। ওয়ালটন পরিবারের নারী সদস্যদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এসব অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। দিবসটি উপলক্ষে নারী সদস্যদের মাঝে বিতরণ করা হয় চকোলেট।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুরু ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে একটি কারখানার নারী শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা ও ন্যায্য মজুরিসহ কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। গ্রেপ্তার হন বহু নারী। পরবর্তী সময়ে আন্দোলন আরও দানা বেঁধে ওঠে। অবশেষে ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই সারা বিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

এরপর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন।’

জানা গেছে, পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রসহ সর্বত্র নারীর সুস্থ শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ‘ফিমেল ইনভলভমেন্ট ইন ভার্সাটাইল এমপাওয়ারমেন্ট’ (এফআইভিই বা ফাইভ) শীর্ষক একটি ডাইভারসিটি অ্যান্ড ইনক্লুসন বা ডিঅ্যান্ডআই প্যানেল রয়েছে ওয়ালটনের। বাংলাদেশে ওয়ালটনই প্রথম ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি শিল্পখাতে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। ‘এফআইভিই’ (ফাইভ) শীর্ষক এই ডিঅ্যান্ডআই প্যানেল একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়ালটনের ‘ভিশন-গো গ্লোবাল ২০৩০’ অর্জনে কাজ করছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে নারীবান্ধব সুষ্ঠু কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করছে ওয়ালটন।

করপোরেট অফিস

নারী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটন করপোরেট অফিসে বেলা সাড়ে ১১টায় একটি র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি করপোরেট অফিস সংলগ্ন বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ওয়ালটনের মূল ফটকে এসে শেষ হয়। সবার অংশগ্রহণে কাটা হয় বিশালাকার একটি কেক। এরপর অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। বিকেলে নারী সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয় চকোলেট।

আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেজর জেনারেল (অব.) ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) নজরুল ইসলাম সরকার, এমদাদুল হক সরকার ও হুমায়ুন কবীর, ওয়ালটন প্লাজার সিইও মোহাম্মদ রায়হান, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান, ফিরোজ আলম, আমিন খান, জাহিদ হাসান, নির্বাহী পরিচালক আজিজুল হাকিম, জিনাত হাকিম, মোহাম্মদ শাহজাদা সেলিম, রফিকুল ইসলাম ও শরীফ হারুনুর রশীদ ছনি, সিনিয়র ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রবিউল আলম ভুঁইয়া, অপারেটিভ ডিরেক্টর হুমায়রা হোসেইন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ডিএমডি হুমায়ুন কবীর বলেন, ওয়ালটন সবসময়ই নারী সদস্যদের সম্মান করে। এখানে নারীদের দেওয়া হয় পুরুষের সমান মর্যাদা। বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে অন্যান্য সব সুবিধার দিক থেকে পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে ওয়ালটনের নারী সদস্যরা। ওয়ালটনে নারীদের সুষ্ঠু নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। নারীর জন্য সুষ্ঠু কর্ম-পরিবেশ সৃষ্টিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে ওয়ালটন।

হেড কোয়ার্টার্স

সকালে গাজীপুরে ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত সদস্যরা বিশাল এক র‌্যালি বের করেন। র‌্যালিটি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এখানেও কাটা হয় কেক; বিতরণ করা হয় চকোলেট।

আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলমগীর আলম সরকার, হেড অব অ্যাডমিন ইয়াসির আল-ইমরান, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহীনুর সুলতানা রেখা, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রফিকুল ইসলামসহ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

আলমগীর আলম সরকার তার বক্তব্যে বলেন, নারী-পুরুষের বৈষম্য চলছে যুগ যুগ ধরে। এ বৈষম্য থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় আমাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। নারীদের দেখতে হবে মানুষ হিসেবে। অবশ্য আগের চেয়ে নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও অনেকটাই উন্নত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র তার প্রমাণ।

ওয়ালটন হেড কোয়ার্টার্সের অনুষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহীনুর সুলতানা রেখা নারী দিবসের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ১৩০ বছর আগে নারী দিবসের সূচনা হয়েছিল। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষের সম অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। আগামীতে এমন এক সময় আসবে যখন নারী অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য বিশেষ কোনও দিবস আর উদযাপন করতে হবে না। সমাজের সব স্তরে নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হবে।

ওয়ালটন কমপ্লেক্স

অন্যান্য স্থানের মতো রাজধানীর মিরপুরে ওয়ালটন কমপ্লেক্সে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে নারী দিবস উদযাপন করেছেন কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজমেন্টে (সিএসএম) কর্মরত সদস্যরা। সকাল সাড়ে ১১টায় ওয়ালটন সার্ভিস পয়েন্টে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কাটা হয় বিশালাকার কেক। এছাড়াও অনুষ্ঠিত হয়েছে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ওয়ালটন কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজমেন্টের চিফ সার্ভিস অফিসার মো. মুজাহিদুল ইসলাম। এর আগে কল সেন্টারের নারী কর্মীদের হাতে ফুল ও চকোলেট দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড পাবলিকেশন সেকশনের প্রধান রবিউল ইসলাম মিলটন, ওয়ালটন কল সেন্টারের প্রধান পাভেল রহমান, ট্রেইনার বদরুল আলম, কল সেন্টারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আমিনা রহমান, নাসরিন আক্তার রিমা ও সুমাইয়া সওদা। এছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাঠকপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম রাইজিংবিডি ডটকম-এর সংবাদকর্মী তানজিনা আফরিন ইভা ও ইয়াসমিন সুমি।

কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করায় ওয়ালটনের প্রশংসা করেন নারী সদস্যরা। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরমজান উপলক্ষে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু বৃহস্পতিবার
পরবর্তী নিবন্ধইউক্রেন যুদ্ধ রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করেছে : প্রধানমন্ত্রী