দান নয়, প্রতিশ্রুত পাওনা চায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো: প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের প্রতিশ্রুত বকেয়া পরিশোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো দান চায় না, আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা তাদের পাওনা চায়।

রোববার (৫ মার্চ) সকালে কাতার জাতীয় কনভেনশন সেন্টারে পঞ্চম জাতিসংঘ এলডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দোহা প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য আশাবাদের আরেক প্রতিশ্রুতি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রকৃত কাঠামোগত পরিবর্তনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই তাদের প্রতিশ্রুতি নবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, উত্তরণ পর্যায়ে থাকা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ভালো কাজ ও সাফল্যের জন্য কিছু প্রণোদনা থাকা উচিত। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দেওয়া আন্তর্জাতিক সুবিধা এসব দেশগুলোর আরও বেশি সময় ভোগ করা উচিত। তাদের আরও বেশি বিনিয়োগ দরকার এবং কীভাবে তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে তা জানা দরকার। তাদের জন্য কিছু উদ্ভাবনী এবং ট্রানজিশনাল ফিনান্সিং ম্যাকানিজম থাকতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমারা যারা স্বল্পোন্নত দেশ আছি তারা দান চাই না, আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা আমাদের পাওনা চাই।

স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে টেকসই সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যে অংশ দ্বিগুণ করতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর টেকসই সহায়তা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে টেকসই ঋণ সহায়তা দিতে পারে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়ন নমনীয় এবং অনুমানযোগ্য করা উচিত। স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় প্রযুক্তি স্থানান্তর বাস্তব এবং অর্থপূর্ণ হওয়া উচিত।

অভিবাসী শ্রমিকের সুরক্ষা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, অধিকার এবং ভালো থাকার জন্য অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা প্রয়োজন। আমরা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ২২৬ মিলিয়ন যুব শক্তিকে ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। করোনা মহামারি এবং পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে বড় একটি ধাক্কা দিয়েছে। বেশির ভাগ স্বল্পোন্নত দেশে মূল্যস্ফীতির কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য ও জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু সংকট এবং ‍কিছু স্বল্পোন্নত দেশে দীর্ঘমেয়াদী সংঘাত।

জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের বিষয়ে সরকার প্রধান বলেন, আমরা জোরপূর্বক বিতাড়িত ১ দশমিক ২ মিলিয়ন বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে। এর তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান নেই।

বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন ২০২৬ সালের দিকে তাকিয়ে আছি। জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বের বড় ৫০টি অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশ একমাত্র স্বল্পোন্নত দেশ। আমরা সার্বজনীন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এ সময় গত এক দশকে বাংলাদেশে দারিদ্রের হার ৩১ দশমিক ৫ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে গড়ার পর আগামীতে আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া।

কাতার জাতীয় কনভেনশন সেন্টারে পঞ্চম জাতিসংঘ এলডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্য দেন দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট সাবা কোরেসি, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট লাচেজারা স্টোয়েভা এবং মালয়ের প্রেসিডেন্ট এলডিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান লাজারাস ম্যাকার্থি চাকাওয়েরা।

পাঁচ দিনের এ সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে যোগ দেওয়ার আগে কাতার জাতীয় কনভেনশন সেন্টারে দেশটির আমিরের উপস্থিতিতে এলডিসি সম্মেলনের ফ্যামিলি ফটোসেশনে অংশগ্রহণ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে গতকাল শনিবার (৪ মার্চ) এলডিসি সম্মেলনে যোগ দিতে দোহা আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৮ মার্চ দেশে ফিরবেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুঁজিবাজারে সূচকের বড় উত্থানে লেনদেন বেড়েছে 
পরবর্তী নিবন্ধউখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুন