নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ সেকেন্ড রিকভারি অ্যান্ড রিজিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিডের আওতায় গত বছরের মার্চে বাংলাদেশের জন্য ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার অনুমোদন দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এ ঋণের জন্য বিশ্বব্যাংক ১২টি শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে বেশিরভাগ শর্তই এখনও পূরণ হয়নি। কিছু শর্ত পূরণের প্রক্রিয়া চলছে।
সম্প্রতি অর্থ বিভাগের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রদত্ত শর্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেহানা পারভিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা। তারা দ্রুত অর্থ ছাড়ের জন্য আগের দেওয়া শর্তগুলো জরুরি ভিত্তিতে পূরণ করার পরামর্শ দিয়েছে। বলা হয়েছে, শর্ত পূরণ না হলে বাজেট সহায়তা পেতে আরও দেরি হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, চলমান ডলার সংকটের সময় বাজেট সহায়তার গুরুত্ব অনেক। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের বেশিরভাগ শর্ত পূরণের কাজ শুরু হয়েছে। ঋণ পেতে শর্তগুলো বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, ঋণের জন্য বিশ্বব্যাংক যে ১২টি শর্ত দিয়েছিলো, এর মধ্যে কিছু শর্ত বাস্তবায়নাধীন আছে। যেমন: ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসির খসড়া ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। খসড়াটি চূড়ান্ত করার বিষয়ে খুব শিগগিরই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হবে।
বিশ্বব্যাংকের আরেকটি শর্ত ছিল—ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রে অটোমেটেড চালান সিস্টেম চালু করা। ইতোমধ্যে এনবিআর তা কার্যকর করেছে।
এছাড়া, শর্ত অনুযায়ী ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও তার দেওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তে এ আইন সংশোধনের শর্ত দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের শর্তগুলোর মধ্যে আরও আছে—‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি’ গঠন করা। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কাজ অনেক দূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা।
বিশ্বব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী, ন্যাশনাল হাউজহোল্ড ডাটাবেজ প্রণয়নে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পাওয়ার ট্রান্সমিশন খাতে পিপিপি চালুর বিষয়েও সার্কুলার জারি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে, সামাজিক সুরক্ষার পুনঃশ্রেণিকরণ তালিকা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের করপোরেট গভর্ন্যান্সকে জোরদার করার জন্য সার্কুলার জারি এবং জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা গ্রহণের মতো কিছু শর্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই।
চলতি অর্থবছরে বাজেট সহায়তাসহ অন্যান্য প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জন্য আপাতত প্রায় ৬০ কোটি ডলার বরাদ্দ রেখেছে। বিশ্বব্যাংকের আইডিএ থেকে এর আগেও বাজেট সহায়তা নিয়েছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছর বিশ্বব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (ডিপিসি) নামের তহবিল থেকে বাংলাদেশ ২৫ কোটি ডলার পেয়েছে।
এর আগে দেশে ডলার সংকটের মধ্যে গত ডিসেম্বরে সচিবালয়ে বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই সময় বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার এবং বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বাংলাদেশ সফর করছিলেন। তাদের সঙ্গে সভায় আইডিএ থেকে বেশি করে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া, ওই সময় বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তাদের দ্রুত ঋণ দিতে তিনি অনুরোধ করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১০০ কোটি ডলারের বাজেট সাপোর্ট পাওয়া গেছে। চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক থেকে আরও ৫০ কোটি ডলার বাজেট সাপোর্ট পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। গ্রিন, রেজিলেন্স, ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট (জিআরআইডি) ডিপিসির ২৫০ মিলিয়ন করে আগামী ২ অর্থবছরে ৫০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে বলে আশা করি।