বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আরবিট্রেশন আইন সংস্কার আবশ্যক

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়ন ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে যুগোপযোগী কার্যকর আইনি কাঠামো প্রয়োজন। আর দ্রুততার সঙ্গে ক্রস-বর্ডার বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনি ব্যবস্থার চেয়ে আরবিট্রেশন ব্যবস্থা বেশি মাত্রায় কার্যকর। সে কারণে যত দ্রুত সম্ভব আরবিট্রেশন আইন সংস্কার প্রয়োজন।

রোববার (২ এপ্রিল) ডিসিসিআই কর্তৃক আয়োজিত ‘বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আরবিট্রেশন আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান অতিথি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে আইনি কার্যক্রম সম্পন্ন করে বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায়। বর্তমান সরকার দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য বদ্ধ পরিকর। বতর্মান প্রেক্ষাপটে আরবিট্রেশন আইন ২০০১ সংস্কারের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

ব্যবসায়ীদের আরও বেশি হারে এডিআর কার্যক্রম ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, কার্যকর এডিআর ব্যবস্থাপনা বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তিনি জানান, মেডিয়েন কনভেনশন স্বাক্ষরিত হবে এবং সিপিসি অ্যাক্ট ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। আরবিট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্নে নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকা প্রয়োজন বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে আগামী ৩ বছর পর দেশটির এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে অধিকতর বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে আরবিট্রেশন আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।

তিনি বলেন,বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা এবং এডিআরের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চায়। বাংলাদেশের কমার্শিয়াল আইনের সংস্কার খুবই জরুরি এবং এক্ষেত্রে ভারতের উদাহরণ বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করা আবশ্যক।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধির ধারাকে আরো বেগবান করার পাশাপাশি বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে আমাদের একটি কার্যকর আইনি কাঠামো প্রয়োজন, যা বিশেষ করে ক্রস-বর্ডার বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দ্রুত ও দক্ষ কন্ট্রাক্ট এনফোর্সমেন্ট বাস্তবায়নে সক্ষম। আমাদের বর্তমান আইনি কাঠামোতে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রথম ধাপেই বিদ্যমান বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, গত কয়েক দশকে আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বাণিজ্য বিরোধের পরিমাণ, ফলে সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে আরবিট্রেশন একটি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সামীর সাত্তার বলেন, ক্রস-বর্ডার সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য বিরোধগুলো দ্রুত ও স্বল্প খরচে সমাধানে প্রচলিত আইনি ব্যবস্থার চেয়ে আরবিট্রেশন ব্যবস্থাই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশি মাত্রায় কার্যকর।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার আশরাফুল হাদি। তিনি বলেন, আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনালের কোর্টের ন্যায় ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। আরবিট্রেশন অ্যাক্ট ২০০১-এর সংজ্ঞায় ‘কোর্ট’ কে ইন্টারন্যাশনাল কমার্শিয়াল আরবিট্রেশনের আদলে যেন হাইকোর্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি তিনি স্ট্যাম্পের শুল্ক প্রদানের সকল প্রক্রিয়া ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করেন এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে আরবিট্রেশন মামলার কার্যক্রমের একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেইজ তৈরির প্রস্তাব করেন।

ব্যারিস্টার হাদি আরও বলেন, বিদেশি নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদের আরবিট্রেশনের জন্য বাংলাদেশ একটি উপযুক্ত স্থান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

বিদ্যমান বাণিজ্য বিরোধসমূহ দ্রুততর সময়ে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একটি ‘আন্তর্জাতিক কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপনেরও প্রস্তাব করেন তিনি।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আকতার, গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী প্রমোদ নায়ার অংশগ্রহণ করেন।

জাভেদ আকতার ডিজিটাল ম্যাকানিজম ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি স্মার্ট আরবিট্রেশন প্রক্রিয়া চালুকরণের উপর জোরারোপ করেন, সেই সঙ্গে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মাঝে আরবিট্রেশন বিষয়ক সচেতনতা বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন।

ইয়াসির আজমান বলেন, আরবিট্রেশন অ্যাক্ট ২০০১ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ, তবে এটার প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরি। পাশাপাশি তিনি এ আইনের দ্রুত বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রয়োগের প্রস্তাব করেন।

প্রমোদ নায়ার বলেন, ভারতে আরবিট্রেশন আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালন সূচকে দেশটির অবস্থানের উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মতো। একইসঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ভারতে পৃথকভাবে ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ পরিচালিত হয় এবং এ ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সময়সীমা ও ফি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি শিগগিরই
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিকূলতা পেরিয়ে পুঁজিবাজার এগিয়ে যাবে : শিবলী রুবাইয়াত