নিউজ ডেস্ক : কলাগাছের আঁশ থেকে তৈরি করা হয় সুতা। আর সেই সুতা তাঁতে বুনে তৈরি করা হয়েছে শাড়ি। শাড়িটি বোনা হয়েছে বান্দরবানে। জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজির অনুরোধে মৌলভীবাজারের মনিপুরী তাঁত শিল্পী রাধাবতী দেবী বান্দরবানে এসে প্রথমবারের মতো কলাগাছের সুতা থেকে এ শাড়িটি বুনেছেন। তবে বুনন শিল্পীর নামের সঙ্গে মিল রেখে শাড়িটির নামকরণ করা হয়েছে ‘কলাবতী শাড়ি’।
প্রথম পর্যায়ে কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা তৈরি করা হতো। পরে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ সুতা থেকে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরি করা হয়। সর্বশেষ মনিপুরী তাঁত শিল্পী রাধাবতী দেবী এ সুতা দিয়ে ১৫ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে শাড়িটি তৈরি করেছেন।
জানা গেছে, ২০২১ সালে কলাগাছ থেকে সুতা তৈরি এবং সে সুতা থেকে বিভিন্ন হস্ত সামগ্রী তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। পরে বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে জেলার বিভিন্ন পাড়ায় যুবক-যুবতীদের কলাগাছের সুতা থেকে হস্তশিল্প তৈরির প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করেন এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে কলাগাছের সুতা থেকে ব্যাগ, জুতা, ফাইল, পাপোশ, ফুলদানি কলমদানিসহ নানান হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরি করছেন এলাকার নারীরা। এ ছাড়াও তাদের তৈরি এসব হস্তশিল্প সামগ্রী পর্যটকদের কাছে বিক্রির জন্য নীলাচল পর্যটনে ব্র্যান্ডিং বান্দরবান নামে একটি দোকানেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। ধীরে ধীরে কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি হস্তশিল্প পর্যটকসহ সকলের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়।
পরে কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু তিনি বান্দরবানের বিভিন্ন হস্তশিল্পীদের কাছে শাড়ি তৈরির প্রস্তাব দিলে তারা আগ্রহ প্রকাশ না করায় পরে সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে একজন দক্ষ বুনন শিল্পী নিয়ে আসেন। এরপর কলাগাছের এক কেজি সুতা দিয়ে ১৫ দিনের চেষ্টায় বুনন শিল্পী রাধাবতী শাড়িটি তৈরি করেন।
মণিপুরী তাঁতশিল্পী রাধাবতী দেবী জানান, জেলা প্রশাসকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বান্দরবানে এসে তিনি শাড়িটি বুনেছেন। তার এলাকায় যারা মনিপুরী শাড়ি বুনেন সবাই তাকে বলেছিলেন এ দায়িত্ব না নিতে। তারপরও তিনি এ চ্যালেঞ্জ নেন এবং সফল হন।
রাধাবতী জানান, ৭৫ সাল থেকেই তিনি সুতা দিয়ে শাড়িসহ নানা কিছু তৈরি করতেন। কিন্তু কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি ছিল তার কাছে একেবারেই নতুন। যেহেতু কলাগাছ থেকে সুতা তৈরি হয়েছে আর সেই সুতা দিয়ে শাড়ি বানাতে আপত্তি নেই। জেলা প্রশাসকের অনুরোধের পর তিনি নেমে পড়েন কাজে। ১৫ দিনের চেষ্টায় আরো তিনজন সহযোগীকে নিয়ে তাঁতে বসে তৈরি করে ফেলেন জামদানি ডিজাইনের কলা গাছের সুতা দিয়ে তৈরি শাড়ি। সাধারণ সুতায় ৫০০ গ্রাম দিয়ে যেখানে একটি শাড়ি তৈরি করা যায় সেখানে কলাগাছের সুতায় শাড়ি তৈরি করতে লাগে প্রায় এক কেজি।
জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘আমি জানি না বাংলাদেশের আর কোথাও এখন পর্যন্ত কলা গাছের সুতা থেকে কেউ শাড়ি তৈরি করেছেন কিনা। যদি না করে থাকে তবে এটিই হবে বাংলাদেশে কলাগাছের সুতার তৈরি প্রথম শাড়ি।’
তিনি বলেন, এর মধ্যে কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরি নানা ধরনের হস্তশিল্প মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। নানা জায়গায় তা সমাদ্রিত হয়েছে। এখন শাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বান্দরবানের উৎপাদিত পণ্য দেশে-বিদেশে রফতানির পাশাপাশি গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সাফল্যে বড় অবদান রাখবে।’
এ সময় শাড়ি তৈরির কারিগর রাধাবতী দেবী, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আতিয়া চৌধুরী ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রভাষক সাই সাই উ নিনিসহ সহযোগী সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জেলা প্রশাসক।