কিছুটা সবজির দাম কমলেও বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি

নিজস্ব প্রতিবেদক : সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কিছুটা কমলেও বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের হাতে তেমন টাকা নেই। তারা যতটা পারছে কম টাকায় মাস চলার চেষ্টা করছেন। এ জন্য তাদের ভেতর জিনিসপত্র কম কেনার একটি ঝোঁক তৈরি হয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, সবজির দাম কিছুটা কমেছে এটা ঠিক। কিন্তু অন্যদিকে সমন্বয় করতে গিয়ে অনেক কিছুই কম কিনতে হচ্ছে তাদের। তাই একপ্রকার অস্বস্তির মধ্যেই দিন পার করছেন তারা। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার তদারকির দাবি জানিয়ে ক্রেতারা বলেন, প্রতিনিয়তই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।
এদিকে বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ফলে চালের দাম এখন নিম্নমুখী থাকার কথা থাকলেও এখন উল্টা চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত সপ্তাহের চেয়ে মাঝারি ও মোটা চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় মাঝারি চালের পায়জাম কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা। এ ছাড়া মোটা চালও (গুটি স্বর্ণা, চায়না ইরি) কেজিতে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। গত সপ্তাহে এ ধরনের চাল কেনা গেছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়। তবে সরু বা মিনিকেট ৭০ টাকা ৭৫ টাকা।

গত এক বছরের তুলনায় সব ধরনের মসলার দাম বেশি। খুচরা পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৬০ টাকা। যা মাসখানেক আগে বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। অথচ গত বছরের এ সময় জিরার কেজি ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। লবঙ্গের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। এক বছর আগে লবঙ্গ কেনা গেছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। সেই হিসাবে পণ্যটি কেজিতে বেড়েছে ৪০০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ৩০ টাকা বেড়ে দারচিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫২০ টাকায়। বাজারে চীনা আদা মিলছে না। তবে অন্য দেশের আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা কমেছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে।

চিনির বাজারে পুরোপুরি স্বস্তি ফেরেনি। মাঝে কয়েকদিন প্যাকেটজাত চিনি দেখা গেলেও এখন আবার আগের মতো ‘নাই’ হয়ে গেছে। তবে খোলা চিনি পাওয়া যাচ্ছে। সরকার ১২০ টাকা দর বেঁধে দিলেও বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে।

সপ্তাহ দুয়েক ধরে মুরগি ও ডিম উচ্চমূল্যে উঠে স্থির হয়ে আছে। ব্রয়লারের কেজি ২১০ থেকে ২২০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ডিমের ডজন ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। এদিকে আমদানির খবরে বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা কমেছে। একমাসের ব্যবধানে ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকায় ওঠা পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি। তবে চিনি, ডিম, আদা, মাছ-মাংস চড়া দামেই রয়েছে।
শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা দরে। খাসির মাংসের দাম প্রতি কেজি ১২৫০ টাকা। বকরির মাংস ১০০০ টাকা।

এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের পাঙাস-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে বাজারে প্রতি কেজি পাঙাস বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা এখন ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, যা আগে ১৮০-২০০ টাকায় কেনা যেতো। বাজারে সাধারণত গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা ব্রয়লার মুরগি এবং পাঙাস- তেলাপিয়া মাছের পরে বেশি নির্ভরশীল। তাদের মধ্যে অনেকে এসব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মতিঝিল বাজারে মাছ বিক্রেতারা জানান, তিনি প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি করছেন ৬০০-১০০০ টাকায়। যা আগে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতেন। অন্যান্য চাষের মাছগুলোও বেশ বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাজা রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজিতে, যা আগে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা ছিল। অন্যদিকে মুদি বাজারে তেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ অন্যান্য বেশকিছু পণ্য বাড়তি দামে আটকে রয়েছে। প্রতি কেজি বোতলজাত সয়াবিন তেল ২০০ টাকা ।
বাজারে গ্রীষ্ম মৌসুমের সবজির সরবরাহ ভালো থাকায় কিছুটা সবজির দাম কমেছে। প্রতিকেজি বেগুন, করলা, ঝিঙা, পটল ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে মতিঝিল কলনি বাজারে এক ক্রেতা সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আমার বেতন এ বছরের শুরুতে যা ছিল এখনো তাই আছে। এক টাকাও বাড়েনি। কিন্তু প্রায় সবকিছুরই দাম বেড়ে যাওয়ায় আমার মাসিক খরচ অন্তত ১০ হাজার টাকা বেড়েছে। এই বাড়তি খরচের বোঝা টানতে গিয়ে সবকিছুর মধ্যে সমন্বয় করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘এমন কিছু খরচ আছে যেগুলো কমানোর উপায় নেই। যেমন- গাড়ি ভাড়া, বাচ্চার খাবার, বাসা ভাড়া বেতন এসব কমানোর তো উপায় নেই। কাজেই যেখানে খরচ কমানো সম্ভব সেখানে কমানোর চেষ্টা করছি। আগে খাবারে ৪ থেকে ৫ পদের তরকারি থাকতো, এখন সেটা ২ থেকে ৩ পদে নামিয়ে এনেছি।
এবিষয়ে বেসরকারি কর্মকর্তা সুমন বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ, বাসা ভাড়া, পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে আগে প্রতি মাসে কিছু টাকা সঞ্চয় করতাম। এখন সঞ্চয় তো হয়ই না, বরং যা জমা ছিল সেখান থেকে খরচ করতে হচ্ছে। সবজির দাম কমেছে এটা সত্য, কিন্তু অন্যান্য খরচ তো বেড়ে গেছে। চলা খুব মুশকিল হয়ে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদে ট্রেনের অগ্রীম টিকিট বিক্রি শুরু ১৪ জুন
পরবর্তী নিবন্ধহাজিদের সেবায় গিয়ে না জানিয়ে তায়েফে, ৭ জনকে শোকজ