নিউজ ডেস্ক : গাজীপুরের সালনায় গৃহশিক্ষক কর্তৃক নৃশংসভাবে কুপিয়ে কলেজছাত্রীকে হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে বিদেশ যেতে চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে রাবেয়া আক্তারকে খুন করেন গৃহশিক্ষক সাইদুল ইসলাম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বুধবার (১০ মে) রাতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকা থেকে সাইদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২০ সালে করোনাকালীন ভিকটিমের পরিবারের সবাইকে আরবি পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক হিসেবে তার বাবা তাকে নিয়োগ করেন। আরবি পড়ানোর সুবাদে সে প্রতিনিয়ত ওই শিক্ষার্থীর বাসায় যাওয়া-আসা করতেন। একপর্যায়ে পরিবারের সাথে তার সু-সম্পর্ক তৈরি হয়। বিভিন্ন সময় সাইদুল নিহত শিক্ষার্থীর প্রতি কু-নজর এবং একপর্যায়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ৫-৬ মাস আরবি শেখানোর পর পড়ানো বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে সাইদুল প্রতারণামূলকভাবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মৌখিকভাবে বিয়ে করে। পরবর্তীতে সাইদুল বিয়ের বিষয়টিকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। নিহতের পরিবার অসৎ উদ্দেশ্যের বিষয়টি জানতে পেরে সাইদুলের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে গাজীপুর সদর থানায় বিভিন্ন সময়ে তাকে উত্যক্ত করার বিষয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেন।
তিনি বলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে সাইদুল কিছুদিন তাকে উত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু গত দুই মাস ধরে তাকে কলেজে এবং বাসার বাইরে যাওয়া-আসার পথে পুনরায় তাকে উত্যক্ত করতে থাকেন এবং প্রস্তাবে রাজি না হলে প্রাণনাশের হুমকি দেন। একপর্যায়ে সাইদুল জানতে পারেন শিক্ষার্থীর পরিবার তকে উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যা সাইদুল কোনভাবেই মেনে নিতে না পেরে তার পরিবারের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যার পূর্বপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ৭ মে বিকেলে স্থানীয় বাজারে কামারের দোকানে ৬৫০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি তৈরি করতে দেন। পর দিন সন্ধ্যায় ছুরি সংগ্রহ করে বাসায় গিয়ে তার রুমে ঢুকে ধারালো ছুরি দিয়ে মাথায়, গলায়, হাতে এবং পায়ে উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তার চিৎকারে তার মা ও দুই বোন দৌড়ে তার ঘরে গিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে সাইদুল ছুরি দিয়ে তাদেরকেও এলোপাতাড়িভাবে কুপিয় জখম করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। তাদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
র্যাব জানায়, সাইদুল ২০২০ সালে জয়দেবপুরের একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে গাজীপুরের চৌরাস্তার একটি কলেজে স্মাতক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি স্থানীয় একটি বিউটি প্রোডাক্টস অনলাইন শপে চাকরি করতেন। এছাড়াও নিহত উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য কিছুদিন পূর্বে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন এবং ভিসাসহ আনুসাঙ্গিক নথিপত্র প্রস্তুত করছিলেন।
সাইদুল চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরা পাস করেন। সে গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন এবং এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন। ২ মাস আগে দুটি চাকরিই ছেড়ে দেন। ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য সে নিজের চেহারা পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের ভূঞাঁপুরে তার এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে যান। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাকালীন গত রাতে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।
উল্লেখ্য, ৮ মে রাতে গাজীপুরের সালনা এলাকায় গৃহশিক্ষক কর্তৃক কলেজ ছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা এবং নিহতের মা ও ২ বোনকে উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে মারাত্মকভাবে জখম করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদি হয়ে গাজীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।