সদিচ্ছার অভাবে বাণিজ্যনির্ভর অর্থপাচার রোধ সম্ভব হয়নি : এবিবি চেয়ারম্যান

নিউজ ডেস্ক : ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেছেন, আমদানি ও রপ্তানিনির্ভর (ট্রেড বেজ) যে অর্থপাচারের ঘটনা ঘটেছে, তা বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঘটেছে। সদিচ্ছার অভাবে তা রোধ করা সম্ভব হয়নি।

সোমবার (২২ মে) রাজধানীর ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এবিবি আয়োজিত ‘ব্যাংকিং সেক্টর আউটলুক-২০২৩’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনবল তৈরির পর অর্থপাচার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে বলেও জানান এবিবি চেয়ারম্যান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন, এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম শিরিন, এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী প্রমুখ।

খেলাপি ঋণ কমানোর পথে প্রচলিত আইন ও উচ্চ আদালতের ‘স্টে অর্ডার’ প্রতিবন্ধকতা- উল্লেখ করে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, কোনো বড় ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিলেই তিনি উচ্চ আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে এসে আবার অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। একইভাবে খেলাপির নাম প্রকাশ করাও সম্ভব হয় না। ব্যাংক কোম্পানি আইন প্রতিবন্ধতা তৈরি করে।

তিনি বলেন, ব্যাংকের ইচ্ছে থাকলেও খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব নয়। পুরনো ঋণ ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন না থাকাটাও এখানে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। খেলাপি ঋণ কমানোর ক্ষেত্রে সার্বিক অবস্থার উন্নতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, প্রবাসী আয় দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। কিন্তু যে প্রবাসীরা এই অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন, তাদের যোগ্য সম্মান দেওয়া হয় না, বরং বিমানবন্দর থেকে শুরু করে নানা জায়গায় তারা বঞ্চনার শিকার হন। প্রবাসী আয় দেশে পাঠানোর মতো কাজের জন্য তাদের স্বীকৃতি দিতে হবে।

তিনি বলেন, সুদের হার বাজারভিত্তিক হওয়া কতটুকু প্রয়োজন তা নিয়ে চিন্তা করা উচিত। ৬ ও ৯ শতাংশ যে সুদহার বেঁধে দেওয়া হয়েছিল তা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে। এখন আসছে মুদ্রানীতিতে যদি সুদহারে ক্যাপ তুলে দেওয়া হয়, তারপরও তা বাজারভিত্তিক হবে না। তবে এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে যে অর্থনৈতিক মন্দা, সামষ্টিক অর্থনীতির চাপ, রিজার্ভের সংকট গেছে, তা গত ৩৫ বছরে দেখেনি দেশের ব্যাংক খাত। গেল বছরের জুন-জুলাইয়ে ভয়াবহ মন্দায় গেছে দেশ। এ বছরই টাকার মান কমেছে ২৫ শতাংশ, যা অকল্পনীয়। ডলার সংকট কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি শুরু করায় মূলত তারল্য সংকট দেখা দেয়।

এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, গত বছরের তুলনায় এখন স্বস্তিতে ফিরেছে দেশের ব্যাংক খাত। দু-একটি ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকে ডেফার্ড পেমেন্ট বাকি নেই। তবে ২০১৮ বা ২০১৯ সালের মতো অবস্থায় আসতে এখনো বেশ সময় লাগবে।

তিনি বলেন, আগামী জুলাই থেকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার (বিশেষ করে ডলার) একক দাম চালু হতে যাচ্ছে। একইসঙ্গে দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এসে ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার মতো কাঠামো বদলের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান।

একটি বিশেষ শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করলেও বোর্ড থেকে কোনো চাপ সৃষ্টি হয় না বলে জানান, এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী।

চেয়ারম্যান মাশরুর আরেফিন বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য আছে। ঋণ নিতে এসে কোনো গ্রাহক টাকা পাননি, এমন ঘটনা ঘটছে না।

তিনি বলেন, করোনার পর ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে চলা অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে শুরু করছে ব্যাংকিং খাত। ফলে আমানত বাড়ছে, কিন্তু সে তুলনায় ঋণ বিতরণ কমেছে। এ কারণে বর্তমানে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত তারল্য জমা হয়েছে। প্রবাসী আয় আয়ের বর্তমান প্রবাহ ইতিবাচক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেয়ারবাজারে লেনদেন কমেছে
পরবর্তী নিবন্ধ‘জাতীয় চা পুরস্কার’ পাচ্ছে ৮ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি