ডেস্ক নিউজ: নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে যে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রস্তাব করা হয়েছে, তার ২০ শতাংশের বেশি যাবে দশটি মেগা প্রকল্পে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই দশ মেগা প্রকল্পে মোট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৫২ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এই বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা বা ৩২ শতাংশ বেশি। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে দশ মেগা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৪০ হাজার ১১ কোটি টাকা।
আগামী বৃহস্পতিবার (১১ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন এডিপি অনুমোদন পেতে পারে।
দশ মেগা প্রকল্পের মধ্যে দেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬ মতিঝিল পর্যন্ত সম্প্রসারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্ণফুলী টানেল, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ এবং পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
চলতি অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে ১ হাজার ৫২৫টি প্রকল্প রয়েছে। এরমধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৪১০টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১৫টি।
নতুন অর্থবছরের এডিপির তালিকায় ৮২৫টি অননুমোদিত নতুন প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে এবং বৈদেশিক অর্থায়ন প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত আরও ২১৬টি প্রকল্প রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের যুগ্ম প্রধান ড. নূরুন নাহার বলেন, “সরকার আগামী এডিপির জন্য রিসোর্সের যে সিলিং আমাদের দিয়েছে, সেখান থেকে প্রকল্পের চাহিদা অনুযায়ী আমরা বরাদ্দ দিয়েছি।”
কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবিত এডিপিতে প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বা প্রায় ৪ শতাংশ দেওয়া হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পটির জন্য ১১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকার বরাদ্দ ছিল।
দেশের ইতিহাসে একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। রাশিয়ার অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় ২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি আগামী ২০২৫ সালে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
নতুন এডিপিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ‘মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার’ প্রকল্পে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এই প্রকল্পটির জন্য ৭ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে।
জাপানের অর্থায়নে দেশের তৃতীয় ব্যয়বহুল ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি লাইন-১)। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং নতুন বাজার হয়ে পূর্বাচলের পিতলগঞ্জ পর্যন্ত ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকা।
এই মেগা প্রকল্পটির জন্য নতুন বছরের এডিপিতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। চলতি সংশোধিত এডিপিতে এই প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৪৮৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০২৬ সালে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের জন্য নতুন এডিপিতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা রয়েছে।
গত ডিসেম্বর মাসে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে। ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-৬) নামের প্রকল্পটি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত চালুর কথা রয়েছে। আগামী বাজেটের এডিপিতে এই প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ৪৯ কোটি টাকা।
রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি কক্সবাজারের রেলসংযোগ স্থাপনে চলমান ‘দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল নির্মাণ প্রকল্পে’ আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের আরএডিপিতে প্রকল্পটির বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা।
আগামী সেপ্টেম্বর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল চলাচল শুরু হবে বলে সম্প্রতি রেল সচিব হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মানাধীন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ প্রকল্পের জন্য নতুন এডিপিতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৭৩৫ কোটি টাকা।
মেগা প্রকল্প ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য নতুন এডিপিতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। চলমান সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পটির বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
সাড়ে ৭% কমিয়ে এডিপি সংশোধন, পুরোটাই কমেছে প্রকল্প সহায়তা
যমুনা নদীর ওপর নির্মিতব্য ‘বঙ্গবন্ধু রেলসেতু’ নির্মাণ প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোশিদত এডিপিতে এ প্রকল্পটিতে বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পটিও শেষ করার কথা রয়েছে।
দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর ‘মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন’ প্রকল্পে নতুন এডিপিতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। চলতি সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ১৮৭ কোটি টাকা। জাপান সরকারের অর্থায়নে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি ২০২৬ সালে শেষ করার কথা রয়েছে।
দেশের আরেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ’। নতুন এডিপিতে এর জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের আরএডিপিতে প্রকল্পটিতে বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা।