আয়বৈষম্যের চেয়ে সম্পদের বৈষম্য বেড়ে দ্বিগুণ: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে আয় বেড়েছে দ্বিগুণ। একইসঙ্গে বেড়েছে বৈষম্যও। দেখার বিষয় হলো- আয়বৈষম্যের চেয়ে সম্পদবৈষম্য বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। আয়বৈষম্য ১ দশমিক ৪ শতাংশ হলে সম্পদবৈষম্য বেড়েছে ৩ শতাংশেরও বেশি। অর্থাৎ সম্পদের বৈষম্য ক্রমান্বয়ে ঘণীভূত হচ্ছে। এ বৈষম্য কয়েকগুণ হারে বাড়ছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এমন তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার (২৪মে) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় ‘স্টেট অ্যান্ড স্কোপ অব প্রোপার্টি ট্যাক্সেসন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে সিপিডি। এ সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সেমিনার সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

তিন ধরনের সম্পদের কর নিয়ে সিপিডি কাজ করেছে। সেগুলো হলো- প্রত্যক্ষ সম্পদ কর, হোল্ডিং কর ও উত্তরাধিকার কর। এ তথ্য জানিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বর্তমানে সম্পদের সার চার্জ ৩৫ শতাংশ। এটাকেও আমরা উচ্চ কর বলে মনে করছি।’

তিনি বলেন, ‘ট্যাক্স সিস্টেমের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যেও বৈষম্য রয়েছে। দেশের ভেতরে সম্পদ যেভাবে কেন্দ্রীভূত হয়েছে, যেভাবে আয়বৈষম্য বেড়েছে। ন্যায্যতা ও বৈষম্য কমাতে সম্পদের করের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।’

উন্নয়নপ্রকল্পে সরকার ট্যাক্স পরিশোধ করে না জানিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সরকার যখন নিজে কোনো প্রকল্প হাতে নেয়, সেটা স্পেশাল ইকোনমিক জোন (বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল) হোক বা অন্য কিছু, তখন দেখা যায়, তারা (সরকার) নিজেরা ট্যাক্স দেন না। এটা (ট্যাক্স পরিশোধ) অনেক পুরানো। সরকার যখন বিদেশ থেকে কিছু পেতো, একটা সময় ছিল এগুলোর আমদানি শুল্ক দিতো না। এখন সরকার এগুলোর আমদানি শুল্ক দেয়। এটা হিসাবের ভেতরে ঢোকে। এখন যেসব ছাড় দেওয়া হচ্ছে, এগুলো কাউকে না কাউকে দেওয়া উচিত। তাহলে হিসাবটাও বাড়তো। সরকারের হিসাবের ভেতর এটা বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ হিসেবে আসতো। সরকার তার নিজের প্রকল্পে ছাড় দিলে ব্যক্তিখাতে যারা থাকেন, তাদের সঙ্গেও প্রতিযোগিতায় অসাম্য সৃষ্টি হয়।’

মূলপ্রবন্ধে তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচ ধরনের ট্যাক্স চলমান রয়েছে। সেগুলো হলো- ভূমি উন্নয়ন কর, ওয়েলথ সারচার্জ (সম্পদ কর), হোল্ডিং ট্যাক্স, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ও গিফট ট্যাক্স। এর মধ্যে স্থাবর সম্পত্তি যখন নিজেদের মধ্যে দান বা হেবা হয়, সেখানে কোনো ট্যাক্স নেই। আমরা এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলেছি। শুধুমাত্র উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ ট্যাক্স অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নতুন এলাকা হিসেবে ভূমি কর আধুনিক করতে হবে। হোল্ডিং ট্যাক্সকে যুগোপযোগী করতে হবে। সম্পদ আয় করে একটি প্রজন্ম। এটা ভোগ করে পরবর্তী প্রজন্ম। সেখানে ন্যায্যতা নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের উত্তরাধিকার কর প্রচলন করা অত্যন্ত প্রয়োজন।’

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সম্পদ করের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছি। জমি ও বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে কর আরোপ হচ্ছে না। এখানে বৈষম্য রয়েছে। জমির ওপর বিনিয়োগ বাড়ছে। কারণ জমির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এর বড় কারণ এ বিনিয়োগে বড় ধরনের কর দিতে হয় না।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুঁজিবাজারে লেনদেন ছাড়াল হাজার কোটি টাকা
পরবর্তী নিবন্ধটিসিবির জন্য কেনা হবে ১ কোটি ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল