নিউজ ডেস্ক: শুক্রবার ঢাকায় বসছে দুই দিনব্যাপী ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন। সম্মেলনে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো কিভাবে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে পারে, সেই বার্তা দেওয়া হবে। এছাড়া পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উঠে আসবে আলোচনার টেবিলে।
‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অংশীদারিত্ব’ থিম শীর্ষক এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে সম্মেলনে মরিশাসের প্রেসিডেন্ট, মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের ৩০ জনের বেশি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা ডেপুটি মিনিস্টারদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারত মহাসাগরীয় পুরো অঞ্চলটা খুব গুরত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলের সম্ভাবনাময় অর্থনীতিকে কিভাবে আরও বেশি করে কাজে লাগানো যায়, সেজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা জরুরি।
মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ইন্ডিয়ান ওশেনটা খুব ভ্রাইব্রেন্ট একটা জোন। এটা খুব ভ্রাইব্রেন্ট ইকোনোমিক জোন। এই ইকোনোমিক জোনে যেন টেকসই কিছু হয় সেটা নিয়ে কথা হবে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট এবং আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিভাবে কাজ করা যায়, সেটা নিয়ে সবাইকে চিন্তা করতে হবে। উন্নয়নের জন্য শান্তি আবশ্যক। শান্তি এবং স্থিতিশীলতা নিয়ে মূলত আলাপ-আলোচনা হবে।
এ কর্মকর্তা বলেন, ইন্ডিয়ান ওশেনের মধ্যে যে চ্যালেঞ্জ আছে, এ অবস্থার মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন কিভাবে টেকসই করা যায়, এ বিষয়গুলো নিয়েই মূলত আলোচনা হবে।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের যে থিম ঠিক করা হয়েছে তার ওপর আলোচনা হবে। সবাই মিলে কিভাবে ইন্ডিয়ান ওশেনকে আরও কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আমাদের ইন্ডিয়ান ওশেনে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন দরকার। কিভাবে এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় যায় তা নিয়ে সবাই মিলে আলাপ করার সুযোগ হবে সম্মেলনে।
এ পর্যন্ত ভারত মহাসাগরীয় পাঁচটি সম্মেলন হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রথম সিঙ্গাপুরে এ সম্মেলন শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা, ২০১৮ সালে ভিয়েতনাম, ২০১৯ সালে মালদ্বীপ, ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পঞ্চম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এক বছর বিরতি দিয়ে যষ্ঠ সম্মেলনটি ঢাকায় হতে যাচ্ছে।
সম্মেলনে কারা আসছেন
ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে যারা থাকছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বীরাজসিং রূপন, মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিম ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বীরাজসিং রূপন সম্মেলনে যোগ দিতে চার দিনের সফরে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ১৪ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। সম্মেলনে যোগ দেওয়া ছাড়াও মরিশাসের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। রুপনের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশে অবস্থানকালে দুটি ইন্ড্রাস্টিয়াল পার্ক পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।
মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিম ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে যোগ দেবেন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) নাসিমের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। পরদিন সম্মেলনে যোগ দিয়ে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে তার। ঢাকায় অবস্থানকালে নাসিমের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন নাসিমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে প্রভাবশালী পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে যোগ দেবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি দুই দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসবেন। সম্মেলনে যোগ দেওয়া ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে জয়শঙ্করের। এছাড়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে।
দক্ষিণ এশিয়া থেকে ভুটান ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। পূর্ব এশিয়া থেকে জাপানের ভাইস মিনিস্টার সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া থেকে মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সম্মেলনে থাকবেন।
আফ্রিকা মহাদেশ থেকে মরিশাসের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও সেশেলসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক মন্ত্রী, মাদাগাস্কারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, সোমালিয়ার ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার সম্মেলনে থাকবেন। কেনিয়া ও তানজানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার এবং মোজাম্বিকের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত সম্মেলনে যোগ দেবেন।
শেখ হাসিনার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর চিঠি
ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন যোগ দিতে ঢাকার আসার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ঢাকায় যে সময়ে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন চলবে ওই সময়ে ইন্দোনেশিয়াতে আসিয়ানের একটি সম্মেলনের কারণে ঢাকা সফর করতে পারছেন না মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা সফরে আসতে পারবেন না বলে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
আসছেন না রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন যোগ দিতে ঢাকার আসার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে এই সম্মেলনে লাভরভ আসতে পারছেন না বলে ঢাকাকে জানিয়ে দিয়েছে মস্কো।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দাওয়াত করা হয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তিনি আসতে পারছেন না।