৪৫ ওভারে ৩২০ তাড়া করে রুদ্ধশ্বাস জয় টাইগারদের

স্পোর্টস ডেস্ক : এই না হলো ক্রিকেট ম্যাচ! পরতে পরতে উত্তেজনা, যে উত্তেজনা ছিল শেষ ওভার পর্যন্ত। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ৪৫ ওভারে ৩২০ তাড়া করে অবিশ্বাস্য এক জয় ছিনিয়ে নিলো বাংলাদেশ।

চেমসফোর্ডে বৃষ্টিবিঘ্নিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে শেষ ওভারে এসে ৩ উইকেট আর ৩ বল হাতে রেখে হারিয়েছে তামিম ইকবালের দল। তিন ম্যাচ সিরিজে নিয়েছে ১-০ লিড।

অনেক নাটকীয়তার ম্যাচে শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৫ রান। হিসেবটা বেশ সহজ। কিন্তু স্বীকৃত ব্যাটার বলতে ছিলেন কেবল মুশফিকুর রহিম।

স্ট্রাইকে গিয়ে মুশফিক প্রথম দুই বলে রান নিলেন না। তৃতীয় বলটি মার্ক এডায়ার ফুলটস দিলে পুল করে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে ক্যাচ তুলে দিলেন মুশফিক। বাংলাদেশের সমর্থকদের চোখেমুখে তখন একরাশ হতাশা। মুশফিক আউট হয়ে গেলে তো সবই শেষ!

কিন্তু নাটকের তখন আরও বাকি। ওই বলটি মুশফিকের কোমরের ওপর ছিল। ফলে রিপ্লে দেখে ‘নো’ দেন আম্পায়ার। ফ্রি-হিট পেয়ে যান মুশফিক। তাতেই বাংলাদেশের সব দুশ্চিন্তার ইতি।

ফ্রি-হিটকে সহজেই সীমানার দড়ি পার করে বিজয় উল্লাসে মাতেন মুশফিক। ২৮ বলে ৪ বাউন্ডারিতে তিনি অপরাজিত থাকেন ৩৬ রানে।

তবে মুশফিকের জন্য এই পথ পাড়ি দেওয়া খুব সহজ কাজ ছিল না। শেষ ৫ ওভারে তার সঙ্গে ছিল না কোনো স্বীকৃত ব্যাটার, রান দরকার ছিল ৩৪।

৪০তম ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজ ১২ বলে ১৯ করে ফিরলে অন্ধকার নেমে এসেছিল টাইগার সমর্থকদের চোখেমুখে। সেখান থেকে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এই জয়।

জয়ের ভিতটা অবশ্য গড়ে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত আর তাওহিদ হৃদয়। আলাদা করে বলতে হয় শান্তর কথা। ১১৭ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার, ৯৩ বলের ঝোড়ো যে ইনিংসে ১২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৩টি ছক্কা।

হৃদয় হাফসেঞ্চুরির পর ফিরলেও তার ইনিংসটা ছিল ভীষণ ইমপ্যাক্টফুল। চতুর্থ উইকেটে শান্তর সঙ্গে ম্যাচ জেতানো জুটি তো গড়েছেনই, চোখ ধাঁধানো কিছু ছক্কা হাঁকিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপের মধ্যে রাখেন এই তরুণ। শান্ত-হৃদয়ের জুটিতেই ম্যাচটা জয়ের পথে চলে আসে বাংলাদেশ।

৪৫ ওভারে লক্ষ্য ৩২০ রান। নিঃসন্দেহে কঠিন। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল আর লিটন দাস দলকে ভরসা দিতে পারলেন না। তামিম তো আউট হয়ে যান ৭ করেই, লিটন ভালো শুরু করলেও থামেন ২১ বলে ২১ রানে।

৪০ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে চাপ সরানো এক জুটি সাকিব আল হাসান আর নাজমুল হোসেন শান্তর। ৪৭ বলে ৬১ রানের জুটিতে প্রতিপক্ষ যখন কোণঠাসা, ঠিক তখন সাকিব ভুল করে বসলেন।

কুর্তিস ক্যাম্ফারের বলে সোজা পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দিলেন সাকিব (২৭ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৬)। আইরিশরা নিয়ে নিলো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ। সেখান থেকে তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে ১০২ বলে ১৩১ রানের ম্যাচ জেতানো জুটি শান্তর।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা শান্ত করেছেন ঝড় তুলেই। ৮৩ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। হৃদয়ও চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং করেছেন।

তবে ৫৮ বলে ৬৮ রান করে থামতে হয়েছে হৃদয়কে। তরুণ এই ব্যাটার তার ইনিংসটিতে ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে হাঁকান ৩টি ছক্কা। যে ছক্কাগুলো রীতিমত চোখ জুড়িয়েছে ক্রিকেটপ্রেমী থেকে শুরু করে ধারাভাষ্যকারদের। একবার তো মাঠের বাইরেই চলে যায় বল।

এর আগে বাংলাদেশের বোলাররা শুরুতে বেশ কোণঠাসা করে রেখেছিলেন আইরিশ ব্যাটারদের। কিন্তু হ্যারি টেক্টরের ১৪০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে ভর করে ৪৫ ওভারে আয়ারল্যান্ড দাঁড় করায় ৬ উইকেটে ৩১৯ রানের পাহাড়।

চেমসফোর্ডে টস জিতে আয়ারল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। শুরুতেই আইরিশরা পড়ে বড় চাপে। হাসান মাহমুদ আর এবাদত হোসেনকে সামলে প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ১৬ রান তুলতে পারে আয়ারল্যান্ড।

হাসান মাহমুদ করেন জোড়া শিকার। ১৬ রানেই ২ উইকেট হারায় আইরিশরা। হাসান ইনিংসের প্রথম ওভারে পল স্টারলিংকে (০) বানান উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ। প্রথমে অবশ্য আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউ নিয়ে জিতে বাংলাদেশ। দেখা যায় বল স্টারলিংয়ের ব্যাট হালকা ছুঁয়ে গেছে মুশফিকের গ্লাভসে।

এরপর আইরিশরা খোলসে ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু সপ্তম ওভারে আবারও আঘাত হানেন হাসান। এবার ড্রাইভ খেলতে গিয়ে আউটসাইডেজ হয়ে মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে ধরা পড়েন স্টিভেন দোহানি (১২)।

১৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় আইরিশরা। ৯৮ রানের জুটি গড়েন হ্যারি টেক্টর আর অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নি। টেক্টর ফিফটি তুলে নেন, বালবির্নিও ছিলেন হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়ায়।

অবশেষে প্রতিরোধ গড়া এই জুটিটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি এই পেসারকে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হন বালবির্নি (৪২)।

এক ওভার পর এসে শরিফুল ফেরান ঝড় তুলতে চাওয়া লরকান টাকারকে। মারমুখী খেলতে গিয়ে মিসটাইমিং হয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন আইরিশ এই ব্যাটার (১১ বলে ১৬)।

এরপর তাইজুল ইসলামকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন কুর্তিস ক্যাম্ফার (৮)। কিন্তু টেক্টরকে আটকানো যায়নি। মারকুটে ব্যাটিংয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ব্যাটার।

বিধ্বংসী এই সেঞ্চুরিয়ান অবশেষে থেমেছেন ৪২তম ওভারে গিয়ে। এবাদত হোসেন বোল্ড করেন তাকে। তবে তার আগে ১১৩ বলে ৭ চার আর ১০ ছক্কায় ১৪০ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস খেলেন টেক্টর।

শেষদিকে নেমে ঝড় তুলেছেন জর্জ ডকরেলও। ৪৭ বলে ৩ চার আর ৪ ছক্কায় ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

বাংলাদেশের দুই পেসার হাসান মাহমুদ আর শরিফুল ইসলাম নেন দুটি করে উইকেট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’: ৫ বোর্ডের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত
পরবর্তী নিবন্ধমোখা: চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের সব ফ্লাইট বাতিল