নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর (২০২২-২০২৩) পর্যন্ত ৫০ বছরে পুঞ্জীভূত কালো টাকার পরিমাণ ১৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি। একই সময়কালে বিদেশে অর্থপাচারের পরিমাণ ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিগত ৫০ বছরে পাচার ও পুঞ্জীভূত কালো টাকার পরিমাণ ১৪৪ লাখ কোটি টাকারও বেশি।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৩-২৪: বৈষম্য নিরসনে জনগণতান্ত্রিক বাজেট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এ তথ্য উপস্থাপন করেন। অর্থনীতি সমিতির অডিটরিয়ামে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম।
সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয় মিলিয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন, যা চলতি অর্থবছরে সরকারি বাজেটের চেয়ে তিনগুণ বড়।
ড. আবুল বারকাত বলেন, কালো টাকার মাত্র ২ শতাংশ সরকারকে উদ্ধারের প্রস্তাব করেছি। এটা যদি উদ্ধার করা সম্ভব হয়, তাহলে সরকার পাবে দুই লাখ ৬৫ হাজার ৭০ কোটি টাকা। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের মোট পরিমাণ ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটে ওই অর্থের মাত্র ৫ শতাংশ উদ্ধার করতে পারলে সরকার ৫৯ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা পাবে। দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ উদ্ধারের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান উৎস হতে পারে কালো টাকা ও অর্থপাচারের খাত।
তিনি বলেন, বিকল্প বাজেটের মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ লাখ ২৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা, যা চলমান অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪ দশমিক ৪২ গুণ বেশি। মোট বাজেটের ৯২ দশমিক ১ শতাংশের যোগান দেবে রাজস্ব আয়। বাকি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বা এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা হবে ঘাটতি বাজেট। বিকল্প বাজেটে কালো টাকা ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বিকল্প রাজস্ব আয়ের ৭২ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর, আর ২৮ শতাংশ পরোক্ষ কর। পরোক্ষ কর বৈষম্য সৃষ্টিমুখী। বিকল্প বাজেট বাস্তবায়ন করলে তা সমাজে বৈষম্য কমাবে।’
রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে অধ্যাপক বারকাত বলেন, ‘দেশে সম্পদ কর নেওয়া হয় না। এ খাত থেকে দুই লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা আসা সম্ভব। কোম্পানির অতিরিক্ত মুনাফার ওপর ৭৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার কর প্রস্তাব করেছি। এনবিআর বহির্ভূত কর যেমন মাদক শুল্ক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে। ভূমি রাজস্ব থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আর বাজেট ঘাটতি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও আমরা বিদেশি অর্থায়ন ও ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পক্ষে নেই। এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেটের ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র, বন্ড, বিদেশে বসবাসরত নাগরিক ও কোম্পানি থেকে নেওয়ার কথা বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্পদ কর, অতিরিক্ত মুনাফা কর, কালো টাকা, অর্থপাচার ও বিলাসীদ্রব্য এ পাঁচ উৎস থেকে সরকার সাত লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেতে পারেন।’ দেশে যেভাবে সব কিছু ঢাকামুখী হচ্ছে তা উন্নয়ন সহায়ক নয় জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এমন কি কিছু মন্ত্রণালয় ঢাকা থেকে স্থানান্তর প্রয়োজন।