করের হার না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানো উচিত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক : জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকলেই ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করার বাধ্যবাধকতা আরোপের পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে করের হার অনেক বেশি। এ কারণে কর ফাঁকি বেশি। করবেষ্টনী বাড়াতে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের বিধান থাকা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে এ ব্যবস্থা বিদ্যমান। করের বোঝা না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানো উচিত।’

শনিবার (২৭ মে) রাজধানীতে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবির ও সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ। ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। অনুষ্ঠানে ইআরএফ‘র সাবেক তিন সভাপতি মনোয়ার হোসেন, সাইফ হোসেন দিলাল, শারমিন রিনভি, সাবেক অর্থ সম্পাদক ও রাইজিংবিডি’র বিশেষ প্রতিবেদক কেএমএ হাসনাত, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রিজভি নেওয়াজসহ কয়েকজন অর্থনৈতিক বিটের প্রতিবেদক আবুল মাল আব্দুল মুহিতের স্মৃতিচারণ করেন।

স্মরণসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আবুল মাল আব্দুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকা অবস্থায় করের হার কমানোর প্রস্তাব করেছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে এগ্রি করেছিলেন। কিন্তু, আমলাতন্ত্রের কারণে তা আর এগোয়নি। এনআইডি যাদের আছে, সবাইকে করের আওতায় আনতে পারলে কর জিডিপির হার ৭ থেকে ৮ শতাংশ বাড়বে।

তিনি বলেন, ১৭ কোটি মানুষের দেশ, অথচ ট্যাক্স দেয় মাত্র সাড়ে ৭ থেকে ৮ শতাংশ লোক। তখন আমি ভাইকে বলেছিলাম, আমেরিকায় যাদের সোস্যাল সিকিউরিটি কার্ড আছে, তাদের ট্যাক্স দিতে হয়। যাদের আয় সাড়ে ৩ হাজার ডলারের ওপরে, তাদের ট্যাক্স দিতে হয়। অথচ আমাদের দেশে করদাতা টিন নম্বর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এমনকি কোম্পানি ও কর্পোরেশনগুলো টিন নম্বর করেছে। এজন্য আমি বলেছিলাম, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, তাদের সবাইকে ট্যাক্স দিতে হবে। এটা সম্ভব। তিনি এ বিষয়ে আমলাদের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বলেছেন। এখন এটা আমার দাবি। কারণ, আমাদের করদাতা বাড়াতে হবে। এজন্য যারই এনআইডি থাকবে, তাকেই ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত জুটির কারণে দেশ ও মানুষের মঙ্গল হয়েছে। কারণ, শেখ হাসিনা মানুষের মঙ্গল চান। আর এই মঙ্গলকে কিভাবে অর্জন করা যায়, সেই মাধ্যম বের করতেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। একই সঙ্গে সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য এই জুটি সব সময় কাজ করেছেন। তার ফলে আজ আমাদের দেশের চেহারা পালটে গেছে। দেশ উন্নত হচ্ছে। আজকে ২৪ ঘণ্টার পথ ৪৫ মিনিটে যেতে পারছি। সেটা সম্ভব হয়েছে এরকম কৃতিপুরুষ ছিল বলে। আমরা তার মাগফেরাত কমনা করছি।

ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ২০০১ সালে হুমায়ুন রশীদ হঠাৎ মারা গেলেন। তখন আমি সৌদি আরবে চাকরিতে। তখন নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাকে ফোন করলেন। প্রস্তাব দিলেন নির্বাচনের জন্য। আমি রাজি না হয়ে বললাম, আমার কাছে ভালো প্রার্থী আছে। নেত্রী জানতে চাইলে বললাম, আমার বড় ভাই। তখন শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মেজাজ গরম মানুষ। পরে আমি দায়িত্ব নিলাম। মুহিত ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সুযোগ দিয়েছেন, যে কারণে দেশে অর্থনৈতিক চিন্তা, অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। এই কৃতিত্বের জন্য সবচেয়ে প্রশংসার দাবিদার শেখ হাসিনা।

সৌদি আরবে স্থায়ী মিশন খোলার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সহযোগিতা পাওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সময় ২৭টি মিশন করা হয়েছে এবং জমি কেনা হয়েছে। সৌদি আরবে ৩৭ বছর পর শেখ হাসিনার সময়ে মিশন হয়েছে। সব মিলিয়ে নিজেদের মিশন থাকার কারণে সরকারের ৪৭ হাজার ডলারের মতো সেভ হচ্ছে।

বিদেশি মিশনগুলোতে জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে আবুল মাল আবদুল মুহিতের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অর্থের অভাবে মিশনগুলোতে জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন করা হতো না। সেটা জানার পর প্রধানমন্ত্রীর সামনেই অর্থমন্ত্রী মুহিত ভাই অর্থ দেওয়ার জন্য রাজি হয়ে যান।

সরকারি কর্মকর্তাদের শতভাগ বেতন বাড়ানো নিয়ে প্রয়াত অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একমত ছিলেন না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তখন তাকে বলেছিলাম, এত বেতন বাড়ালে দেশ তো গ্রিসের মতো দেউলিয়া হয়ে যাবে। কিন্তু, তিনি বললেন, আমরা সবার হাতে টাকা তুলে দেবো। বড় বাজেট দেবো। পরে দেখলাম, তার চিন্তা খুবই ইনোভেটিভ। তিনি একজন ভিশনারি মানুষ ছিলেন। আবুল মাল আবদুল মুহিতের যে কর্মস্পৃহা এবং তিনি তা বাস্তবায়ন করতেন। এজন্যই তিনি প্রশংসার দাবিদার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সুযোগ দিয়েছেন, সেজন্যই তিনি তার চিন্তাধারা প্রয়োগ করতে পেরেছেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিদেশিদের সম্মাননা জানানোর ক্ষেত্রেও আবুল মাল আবদুল মুহিতের অবদানের কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবির বলেন, তাকে নিয়ে কথা বলার জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল না। যেকোনো স্থান থেকে শুরু করলেই হলো। খানিক বললেই অনেক বলা যাবে। মুহিত স্যার ছিলেন বড় মানের অর্থনীতিবিদ। সবকিছুকে তিনি সহজভাবে গ্রহণ করতেন।

সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, রাত ১-২টা পর্যন্ত তিনি জেগে জেগে ফাইল দেখতেন, পড়াশোনা করতেন। কম ঘুমিয়ে কাজ করতে পারতেন। তার প্রচুর প্রাণশক্তি ছিল। তিনি বলতেন, বাংলাদেশ আরও ভালো করতে পারত। কিন্তু, রোহিঙ্গার কারণে করতে পারেনি। ফিলিপাইনে এডিবি’র বার্ষিক সভায় তার এ কথা শুনে মিয়ানমারের প্রতিনিধি নাখোশ হয়েছিলেন।

স্মরণসভায় অন্য বক্তরা বলেন, আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল—তিনি অকপটে সত্য বলতেন। অপ্রিয় হলেও কখনও সত্য থেকে বিচ্যুত হতেন না। সব সময় দেশ নিয়ে ভাবতেন। এরকম মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া দায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাঁচ দিনের সফরে ঢাকায় ওআইসি মহাসচিব
পরবর্তী নিবন্ধপরিবেশ অধিদপ্তর ও ইউএনডিপির উদ্যোগে ওয়ালটনে টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ কর্মশালা