করোনাকাল: সেবাদানকারীরা সম্মানি পেয়েছেন ১৫৪ কোটি টাকা

নিউজ ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর সর্বগ্রাসী বিস্তারে ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে। এর ধাক্কা বাংলাদেশকেও সামলাতে হয়েছে। মরণ এ ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক, সেবক-সেবিকা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা মৃত্যুবরণ করেছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবায় সরাসরি নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মানি বাবদ এ পর্যন্ত ১৫৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এই সম্মানি পেয়েছেন মোট ২৯ হাজার ৮৯০ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। শুধু তাই নয়, কোভিড আক্রান্তদের সেবা করতে গিয়ে সেসব স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ) ব্যক্তিবর্গ মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের ক্ষতিপূরণবাবদ আরও ৯৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ এককালীন বিশেষ সম্মানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই লক্ষ্যে একই বছর ৯ জুলাই অর্থ বিভাগ থেকে একটি পরিপত্রও জারি করা হয়েছিল। এ লক্ষ্যে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সম্মানি বাবদ মোট ৪৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। সম্মানি প্রাপ্তদের মধ্যে চিকিৎসক ছিলেন এক হাজার ১৭৭ জন, নার্স ছয় হাজার ৪৪৭ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ১০০ জন। মোট ৮ হাজার ৭২৪ জনকে এই অর্থ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মোট ২১ হাজার ১৬৬ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ১১০ কোটি ৪১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এই অর্থের মধ্যে চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৬০৬ জন, নার্স ১০ হাজার ২৩২ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ৩ হাজার ৩২৮ জন।

এছাড়া করোনা রোগীদের সেবায় সরাসরি নিয়োজিত সরকারি প্রশাসনের কর্মরতরা মারা গেলে তাদের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭৫০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছিল। এই তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে এই তহবিল থেকে মোট ২৪৫ জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণে অর্থের পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবায় সরাসরি নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও অন্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে ২০২০ সালে ২৩ এপ্রিল একটি পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ।

পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, করোনার রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি চাকরিজীবী যারা নিজেরা আক্রান্ত হবেন বা মারা যাবেন, তাদের জন্য গ্রেড অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এর পরিমাণ ৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা। এতে বলা হয়, ১৫ থেকে ২০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে ৫ লাখ ও মারা গেলে ২৫ লাখ, ১০ম থেকে ১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে ৭ লাখ ৫০ হাজার এবং মারা গেলে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার; ১ম থেকে ৯ম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে ১০ লাখ এবং মারা গেলে ৫০ লাখ টাকা পাবেন।

সূত্র জানায়, করোনার শুরুর দিকে এই রোগের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সরকারি খরচে হোটেলে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু হোটেলের ভাড়া ও খাবারের অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরবর্তী সময়ে সরকার তাদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা বাতিল করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘জ্বালানির মূল্য বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অপরিহার্য’
পরবর্তী নিবন্ধকাতারের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী