ওয়ালটন হেড কোয়ার্টারে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ৫ জুন ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য—‘প্লাস্টিক দূষণ এড়ানো’ (Beat Plastic Pollution)। বৃক্ষরোপণ, বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে ওয়ালটন হেড কোয়ার্টারে পালিত হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস।

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র এনভায়রনমেন্ট, হেল্থ অ্যান্ড সেফটি (ইএইচএস) বিভাগের উদ্যোগে গাজীপুরের চন্দ্রায় হেড কোয়ার্টারে ৩০ মে থেকে ৫ জুন, ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী নানা আয়োজনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গত সোমবার (৫ জুন, ২০২৩) ওয়ালটন হেড কোয়ার্টারে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. ইউসুফ আলী, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. ইয়াছির আল-ইমরান, ইএইচএস বিভাগের প্রধান মো. সাদেরকুর রহমানসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

র‌্যালি শেষে হেড কোয়ার্টার প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করা হয়। এর পর পরিবেশ রক্ষায় করণীয় ও ওয়ালটনের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা সভা হয়।

ওয়ালটনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘বেঁচে থাকার তাগিদে, জীবনধারণের জন্য মানুষ প্রকৃতিকে কাজে লাগায়। আবার প্রকৃতি তার স্বভাব সূত্রে মানুষের বিরোধিতা করে। এই দ্বন্দ্বের ফলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারায়। জীবনে আনন্দকে সহজলভ্য করার জন্য, জীবনকে স্বস্তিদায়ক করার জন্য নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থের আবিষ্কার ও ব্যবহার পরিবেশের স্বাভাবিকতা বিনষ্ট করতে শুরু করল। তাই, পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সচেতন হতে হবে। যত্রতত্র প্লাস্টিক, পলিথিন বর্জ্য যেন আমরা না ফেলি। পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজ করে না ওয়ালটন। ওয়ালটন হেড কোয়ার্টারে ইটিপি যথাযথভাবে পরিচালনা করা হয়। এছাড়া, যতভাবে পরিবেশ ভালো রাখা যায়, তার জন্য ওয়ালটন সার্বিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. ইয়াছির আল-ইমরান বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে পরিবেশদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ প্লাস্টিকের ব্যবহার। দিন দিন আমাদের ব্যবহারের সমস্ত জিনিসেই প্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। তারই খেসারত গুনতে হচ্ছে পরিবেশকে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, প্লাস্টিক ব্যবহার না কমলে মানুষকেও এর খেসারত দিতে হবে। এমনিতেই গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ায় বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়ছে। তার ওপর আরেক আতঙ্কের নাম প্লাস্টিক। পরিবেশের সঙ্গে এই বর্জ্য পদার্থ মেশে না বলেই ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে, আধুনিক গবেষণায় কিছুটা আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক আবিষ্কার করেছেন প্লাস্টিককে চারকোলে রূপান্তরিত করার ফর্মুলা। গবেষকদের কথায়, এই চারকোল মাটির সঙ্গে সহজে মিশে যায়। এমনকি মাটির মধ্যে স্বাভাবিক বিয়োজন প্রক্রিয়ায় বিয়োজিত হয় চারকোল। প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশের সঙ্গে মেশার আগেই চারকোলে পরিণত করতে পারলে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।’

ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহিনূর সুলতানা বলেন, ‘পরিবেশ আমাদের অনেক মূল্যবান কিছু উপহার দিলেও বিনিময়ে আমরা পরিবেশকে উপহার হিসেবে দিচ্ছি বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, সিসা, দূষিত নোংরা জল, অপরিশোধিত বর্জ্য৷ পরিবেশদূষণ ঠিক কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, তা ঘর থেকে বেরুলেই আমরা অনুধাবন করতে পারি৷ পরিবেশ রক্ষায় ওয়ালটন নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হবে। বায়ু বা পানিদূষণের কারণে পরিবেশকে দূষিত করে তোলার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হতে পারে। সকল প্রকার শক্তি এবং পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে অপচয় রোধ করতে হবে। একটি সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে বৃক্ষরোপণ করতে হবে।’

ইএইচএস বিভাগের প্রধান মো. সাদেকুর রহমান বলেন, ‘ওয়ালটন দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার, গাছ রোপণ করা, পানির অপচয় কমানো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার, গ্রিন বিল্ডিং স্থাপন, রিসাইকেল ও পুনঃব্যবহারযোগ্য করে মালামাল ব্যবহার করা, তরল বর্জ্য শোধন করে পুনরায় ব্যবহার করা, ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে কাগজের ব্যবহার কমানো, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও বায়ুদূষণের কারণে ইকোসিস্টেম প্রভাবিত হচ্ছে। তাই, ইকোসিস্টেম ভালো রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। বর্জ্য পদার্থ রিসাইকেল করতে হবে। কাঁচ, প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম বা খবরের কাগজ ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে রিসাইকেল করা প্রয়োজন।’

পরিবেশ ও জৈববৈচিত্র্য রক্ষা, স্লোগান ও আইডিয়া প্রদানকারীকে পুরস্কার দেওয়া হয়

এর পর পরিবেশ ও জৈববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এবং স্লোগান ও আইডিয়া প্রদানে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

এছাড়াও পোনামাছ অবমুক্তকরণ, বৃক্ষরোপণ অভিযান, ওয়ালটন এগ্রিকালচার সেকশনের উদ্যোগে বৃক্ষ প্রদর্শনী, সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম, স্থানীয় স্কুলে বৃক্ষ রোপণ এবং উপস্থিত অতিথিদের মাঝে ‘লাইফ সেভিং কার্ড’ বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

অনুষ্ঠানে ইএইচএস বিভাগের উপ-প্রধান মো. মোস্তাফিজুর রহমান রাজু, ইটিপি ইনচার্জ মো. নাজমুল হাসান দিপু, ফায়ার সেফটি ম্যানেজমেন্ট সেকশন ইনচার্জ মো. ইশাদুল ইসলাম এবং পিসিএম ইনচার্জ মো. জাহিদুল হাসান খানসহ ইএইচএস বিভাগের সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ইভেন্টের সমন্বয়কারী মো. তৌহিদ সরকার (ইএইচএস-অপারেশন)। সঞ্চালনা করেন ইএইচএস বিভাগের উপ-প্রধান মো. মোস্তাফিজুর রহমান রাজু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধহুন্ডি পরিহার করলে সৌদি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে