নিউজ ডেস্ক : বৈরি জলবায়ুর অভিঘাতের বাস্তবতায় পরিবেশ সম্মত উৎপাদন ব্যবস্থায় মনোযোগ বাড়ছে বিশ্বব্যাপী। সার্কুলার ইকোনোমি বা চক্রাকার অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা আছে। পোশাক খাতের ভোক্তা থেকে ব্র্যান্ড এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সব পক্ষই এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক।
পণ্য উৎপাদনে রিসাইকেল বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো ব্র্যান্ড ২০৩০ সালের মধ্যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তিতে উৎপাদিত পোশাক চায়। এ বাস্তবতায় প্রথাগত অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে হবে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে নীতি সহায়তা এবং সব পর্যায়ে অংশীদারিত্ব প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সার্কুলার ইকোনমি সামিটের বিভিন্ন অধিবেশনে বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেছেন দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তা, ব্র্যান্ড-ক্রেতা প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ (বিএই) এ সামিটের আয়োজন করেছে। সার্কুলার ইকোনমি নিয়ে এটি দেশে প্রথম আয়োজন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সার্কুলার ইকোনমির মূল কথা হচ্ছে, রিডিউস, রিসাইকেল ও রিইউজ। বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) নতুন কিছু আইন হতে যাচ্ছে- যেখানে উৎপাদন পর্যায়ে পরিবেশের বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ে উদ্যোক্তাদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। ফলে সার্কুলার ইকোনমি ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।
এ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সম্পদের টেকসই ব্যবহারের জন্য প্রথাগত অর্থনীতি থেকে সার্কুলার ইকোনমিতে যেতে হবে। পরিবেশ থেকে যত কম ভোগ করা যায় সে দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সরকার এবং শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে এ বিষয়ে অংশীদারিত্ব প্রয়োজন।
বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিংয়ের মতে, বাংলাদেশে পোশাক খাত এক দিকে যেমন অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি বাড়াচ্ছে আবার দূষণও বাড়াচ্ছে। এ বর্জ্যকে জ্বালানিতে রূপান্তরে এডিবি সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।
ঢাকায় নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যানি ভ্যান লিইউয়েন বলেন, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সূচকে অনেক উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। সার্কুলার ইকোনোমিতেও নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ রয়েছে এ দেশের।
ইইউ দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব ডেলিগেশন ব্র্যান্ড স্পিনার বলেন, সার্কুলার ইকোনমি এখন সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্রে। পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় প্রধান দেশের অর্থ হচ্ছে এ দেশটি বস্ত্র এবং পোশাক বর্জ্যের দ্বিতীয় প্রধান উৎপাদক। এ কারণে সার্কুলার অর্থনীতিতে বাংলাদেশকে যেতেই হবে। বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচ অ্যান্ড এমের হেড অব সাসটেইনিবলিটি লেয়লা আরটুর বলেন, ফ্যাশন এবং পোশাক শিল্পকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তর করতেই হবে। কারণ, পরিবেশ সচেতনতার কারণে সাধারণ ভোক্তাসহ সমাজের সব পর্যায়ের চাপ বাড়ছে।
এইচ অ্যান্ড এমের বাংলাদেশে কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ থেকে নেওয়া পোশাকের মধ্যে বর্তমানে ২৪ শতাংশ রিসাইকেল্ড। ২০৩০ সালের মধ্যে এ হার শতভাগে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে তাদের।
আয়োজকদের পক্ষে অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী প্রধান মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সার্কুলার ইকোনমি সামিটের লক্ষ্য হলো সমান্তরাল থেকে চক্রাকার ব্যবসায়িক মডেলে পরিবর্তিত হওয়ার সুযোগ অন্বেষণ করা এবং দেশে চক্রাকার অর্থনীতির বাস্তবায়ন ও উন্নয়নে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।