
নিজস্ব প্রতিবেদক : ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) ও ইয়ং পাওয়ার ইন সোস্যাল অ্যাকশন (ইপসা)-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে প্লাস্টিক সার্কুলারিটি বাস্তবায়নে সম্প্রতি র্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ’তে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ সই হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিসিসি এর মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর সিইওঅ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার এবং ইয়ং পাওয়ার ইন এ্যাকশন (ইপসা) এর সিইও আরিফুর রহমান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
হালকা ও খরচ সাশ্রয়ী প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল হিসেবে ভোক্তাদের কাছে পণ্য সহজলভ্য করে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনে প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রয়োজন হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তবে প্লাস্টিক দূষণ বেড়ে চলায় উদ্বেগ হয়ে দেখা দিয়েছে এবং টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে প্লাস্টিক একটি শৃঙ্খল বা ‘লুপ’ এ রাখা প্রয়োজন।
ইউনিলিভার এর গ্লোবাল কম্পাসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী-ইউনিলিভার বাংলাদেশ বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্য ইস্যুতে পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও প্লাস্টিক বর্জ্য সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য ইউনিলিভার এর রয়েছে ‘লেস প্লাস্টিক, বেটার প্লাস্টিক, নো প্লাস্টিক’ মডেল। যার মাধ্যমে বর্জ্যমুক্ত টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে কোম্পানিটি কাজ করে যাচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি নারায়ণঞ্জে বিস্তৃত পরিসরে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে তা ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিস্তৃত করা হয়।
ইপসার সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে ইউনিলিভার বাংলাদেশ ২০২২ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে প্লাস্টিক সার্কুলারিটি প্রজেক্ট শুরু করে, যেটির লক্ষ্য ছিল অনানুষ্ঠানিক ভ্যালু চেইনের পরিধি ও প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ বৃদ্ধি করা। ১২ মাসের পাইলট কার্যক্রমে ৭ হাজার টন অধিক প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি জীবন ধারণের জন্য সাহায্য করা হয় ২ হাজারের বেশি বর্জ্য সংগ্রহকারী কর্মীকে। এ অভিজ্ঞতা থেকে কার্যক্রমটি আগামী বছরগুলোতেও বিস্তৃত করা হবে এবং এ ‘এমওইউ’ এর অধীনে ইউনিলিভার বাংলাদেশ এবং ইপসা চট্টগ্রামের দশ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের লক্ষ্য মাত্রা ঠিক করেছে। এতে ৫ হাজার বর্জ্য সংগ্রহাকারী কর্মীর জীবনমান উন্নত হবে, নাগরিক সচেতনতা বাড়বে এবং চট্টগ্রামে অনানুষ্ঠানিক রিসাইক্লিং ভ্যালু চেইন আনুষ্ঠানিক ভ্যালু চেইনে যুক্ত হবে।
সিসিসির মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, প্লাস্টিক মানব সভ্যতাকে সাহায্য করেছে কিন্তু প্লাস্টিক বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা মানবজাতির জন্য পরিবেশগত হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামের খালগুলো প্লাস্টিক বর্জ্যের বিধ্বংসী প্রভাবে ভুগছে। যার ফলে মাছ মারা যাচ্ছে, জমি অনুর্বর হচ্ছে এবং বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। কর্ণফুলী নদী একটি ভালো উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে যেখানে জমে থাকা প্লাস্টিক নদীর প্রবাহকে বাধা দেয়।
তিনি বলেন, আমাদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। আজকের এ আয়োজন এক সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে সঠিক পথে আগানোর ব্যাপারে আমাকে আশাবাদী করেছে। আমি আশাবাদী যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ইউনিলিভার বাংলাদেশ এবং ইপসার মধ্যে সহযোগিতা স্থানীয় ভ্যালু চেইনকে উন্নত করতে আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সহায়তা করতে এবং চট্টগ্রামে প্লাস্টিকের সার্কুলারটি বাড়াতে সাহায্য করবে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ-এর সিইও এবং এমডি জাভেদ আখতার বলেন, ইউনিলিভার-এর বৈশ্বিক অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে আমরা ২০২০ সাল থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করছি। যার মধ্যে প্যাকেজিংয়ে উদ্ভাবন এবং প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের জন্য একটি টেকসই মডেল তৈরি এবং পরিচালনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।বাংলাদেশের ‘ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়নে আমাদের অবশ্যই প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলা করতে হবে এবং আমাদের পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ইউনিলিভার-এ আমরা আমাদের মাল্টিস্টেকহোল্ডার মডেলের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছি এবং কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে আমরা ভ্যালু চেইনের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছি। যদিও আমরা এখন গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে আমরা চট্টগ্রাম থেকে ৭০০০ টনেরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছি এবং সংগৃহীত প্লাস্টিকের ১০০% পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। তবে এটি বাংলাদেশের সামগ্রিক প্লাস্টিক দূষণ উন্নতির জন্য যথেষ্ট নয়।
তিনি বলেন, আমাদের এ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এমন একটি যাত্রা শুরু করেছি যা আগামী প্রজন্মের জন্য আরও উন্নত এবং টেকসই বিশ্ব তৈরির প্রতিশ্রুতি দেয়। আমার বিশ্বাস আমাদের এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা চট্টগ্রাম শহরকে প্লাস্টিক সার্কুলারিটি ভিশনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।
ইয়ং পাওয়ার ইন এ্যাকশনের (ইপসা) সিইও আরিফুর রহমান বলেন ইপসা চট্টগ্রামে তার যাত্রা শুরু করেছিল এবং তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এ শহরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরটির উন্নয়ন হলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একই হারে বাড়েনি। ফলশ্রুতিতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও সামুদ্রিক বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে। এ কারণে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করা আমাদের জন্য খুবই তাৎর্পযপূর্ণ। আমাদের শহরের পরিবেশ রক্ষায় এবং সাসটেইনেবল প্র্যাকটিস চর্চায় এ উদ্যোগ প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রেখেছে। চট্টগ্রাম শহরের পরিবেশ রক্ষা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা আমাদের সম্মিলিত কর্তব্য।