নিউজ ডেস্ক : প্রাথমিকভাবে ৫১টি সরকারি হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস বা বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয়েছিল। এখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালসহ আরও ১৩২টি সরকারি হাসপাতালে এই স্বাস্থ্যসেবা শুরু করেছে সরকার। এর মাধ্যমে ১৮৩টি সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু হলো।
বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৈকালিক এই স্বাস্থ্যসেবায় অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সিনিয়র কনসালটেন্টরাও রোগী দেখবেন। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) সচিবালয়ের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৩২টি সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবার উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
নতুন করে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু হওয়া হাসপাতালের মধ্যে অন্যতম ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থপেডিকস হাসপাতাল এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল।
অনুষ্ঠানে জাহিদ মালেক বলেন, ইনস্টিটিউশনাল প্রাকটিসকে জনগণ ভালোভাবে নিয়েছে। চিকিৎসকরাও এ পদ্ধতিতে খুশি। যেহেতু এ প্রক্রিয়া ফলপ্রসূ হয়েছে এবং চাহিদা বাড়ছে, সেহেতু আরও ১৩২টি হাসপাতালে ইনস্টিটিউশনাল প্রাকটিসের আওতায় আনছি। আমরা চেষ্টা করবো নতুন এসব প্রতিষ্ঠানে আরও ভালো মানের সেবা নিশ্চিত করতে। এর আগে ৫১টি এবং এ ধাপে ১৩২টিসহ মোট ১৮৩টি হাসপাতালে এ সেবা চালু থাকবে। আগামীতে এ সেবার মাধ্যমে আমাদের স্ব্যস্থ্যসেবার মান আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ইনস্টিটিউশনাল প্রাকটিস চালু হওয়া ৫১টি হাসপাতালে গত দুই মাসে যারা চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৭২৫ জনের সার্জারি হয়েছে। ইনভেস্টিগেশন হয়েছে ৪ হাজার ১৪০ জনের। এতে ফি হিসেবে পাওয়া গেছে ৫১ লাখ টাকা।
করোনা ভ্যাকসিন সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দিয়েছি ১৫ কোটি ৭ লাখ মানুষকে। দ্বিতীয় ডোজ ১৪ কোটি মানুষকে দিয়েছি। এছাড়া প্রথম বুস্টার ডোজ ৬ কোটি ৭৫ লাখ মানুষকে এবং দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ ৩২ লাখ মানুষকে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৩৬ কোটি ২১ লাখ ডোজ টিকা দিতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ৫ থেকে ১১ বছরের এক কোটি ৯২ লাখ শিশুকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে এক কোটি ৪৪ লাখ। ১২ থেকে ১৭ বছরের এক কোটি ৭৪ লাখ শিশুকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। আর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে এক কোটি ৬২ লাখ।
এ সময় ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৩৯০ জন রোগী পেয়েছি। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে ৮২৮ জন। ঢাকা সিটি করপোরেশনে ২ হাজার ৫৬২ জন রোগী রয়েছে। আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম বিভাগ। সেখানে প্রায় ৪০০ জন রোগী পাওয়া গেছে। ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত মোট ২৬ জন রোগী মারা গেছেন। এরা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও ডেঙ্গু বাহিত হেমারেজে মারা গেছেন।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ এখনো কমেনি। আমরা আশা করি এ বিষয়ে জোরদার ভূমিকা রাখবেন স্প্রের বিষয়ে….। আমাদের জনগণও বাড়ি ঘর স্প্রে করবেন আশা করি।
জাহিদ মালেক বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় আমরা একটি ফিল্ড হাসপাতাল করেছিলাম। সেটা আমরা এখন ফিরিয়ে দিতে চায় উত্তর সিটি করপোরেশনকে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।
এর আগে গত ২৭ মার্চ সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালুর ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সে সময় তিনি বলেন, বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সরকারি চিকিৎসকরা নিজ প্রতিষ্ঠানে চেম্বার প্রাকটিস করতে পারবেন। এখানে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানরা পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকরা সপ্তাহে দুদিন করে চেম্বার ডিউটি করতে পারবেন।
চেম্বার ডিউটিতে এখন অধ্যাপকের ফি হবে ৫০০ টাকা। এতে তিনি পাবেন ৪০০, চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতাকারী ৫০, সার্ভিস চার্জ ৫০ টাকা ধরা হয়েছে। এভাবে সহযোগী অধ্যাপকের ফি ৪০০ হলেও তিনি পাবেন ৩০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপকের ফি ৩০০ টাকা, তিনি পাবেন ২০০ এবং এমবিবিএস/ বিডিএস ও সমমানের চিকিৎসকদের ফি হবে ২০০ টাকা, তিনি পাবেন ১৫০ টাকা। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতাকারীর জন্য ২৫ টাকা এবং সার্ভিস চার্জ ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় ছোট অস্ত্রোপচার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এক্সরে, আল্ট্রাস্নোগ্রাফিসহ অন্য যেসব সেবা থাকে, সেগুলোও থাকবে। আর এসব সেবারও মূল্য নিধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তার একটি অংশ পাবেন চিকিৎসক ও সহযোগিতাকারীরা, আরেকটি অংশ পাবে হাসপাতাল।