সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসই’র বাজারমূলধন বেড়েছে ২ হাজার কোটি টাকা

মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার টানা দুই সপ্তাহ পতনের পর গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে, বেড়েছে তার সাতগুণের। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সবকয়টি মূল্যসূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। তবে কমেছে লেনদেনের গতি।গত সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে সাড়ে ২৩ শতাংশ। ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে প্রায় এক শতাংশ। আর বাজার মূলধন বেড়েছে দুই হাজার কোটি টাকা।

দাম বাড়ার তালিকা বড় হলেও গত কয়েক মাসের মতো তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা সংকট ছিল গত সপ্তাহজুড়েও। ফলে দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

এমন বাজারে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ। বাজার মূলধন বাড়ার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ৩৯৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬২টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩টির। এছাড়া ২০৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩৯ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৭২ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বা এক দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মাধ্যমে টানা দুই সপ্তাহ পতনের পর ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক বাড়লো।

প্রধান মূল্যসূচকের সঙ্গে বেড়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে ৫ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১০ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ।

ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকও গত সপ্তাহে বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে ৭ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি ১৩ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে।

সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়লেও লেনদেনের গতি কমে গেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৭৭৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৮২ কোটি ২৩ লাখ টাকা বা ২৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

সবশেষ সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৯৫৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৩ হাজার ৮৬৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৯১১ কোটি ১৪ লাখ টাকা বা ২৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০৫ কোটি ৬৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেমিনি সি ফুডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৯ কোটি ৬২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। ৬৬ কোটি ৪০ লাখ ১৬ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস।

এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইস্টার্ন হাউজিং, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং এবং খান ব্রাদার পিপি ওভেন ব্যাগ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহ একটি বাদে বাকী পাঁচ ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। বেড়েছে বাজার মূলধন পরিমান। কোম্পানিরগুলোর শেয়ার দর পতনের চেয়ে উত্থান ৩ দশমিক ১৯ গুন হয়েছে। লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৮ দশমিক ৮৪ গুন।

এদিকে গত সপ্তাহে শেষ দুইদিন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) লেনদেনে চমক দেখিয়েছে সিএসই। গতকাল বৃহস্পতিবার সিএসইর লেনদেন ৩শ কোটি টাকার ঘরে অবস্থান করেছিল। আগেরদিন বুধবার লেনদেন ৫শ কোটি টাকার ঘরে ছিল। তবে আগের তিন কার্যদিবস (রবিবার, সোমবার ও মঙ্গলবার) লেনদেন ১২ থেকে ২০ কোটি টাকার ঘরে গড়াগড়ি করছিল। সেখান থেকে হঠাৎ করেই শেয দুই কার্যদিবস লেনদেন ৫শ ও ৩শ কোটি টাকা, এটা রীতিমত চমক। তবে এ ধরনের অতি বাড়তি লেনদেনের কোন ব্যাখা দেয়নি সিএসইর কর্তৃপক্ষ।

সিএসইর সূত্র মতে, বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গত বৃহস্পতিবার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৬ কোটি ৬২ লাখ টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৮৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৭২৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৮৯৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১০১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৭৯৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। তালিকাভুক্ত ৩১১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১১৫টির, দর কমেছে ৩৬টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬০টি কোম্পানির।

সিএসইর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পলিচালক মুঠোফোনে বলেন, গত বুধবার লেনদেন ৫৩০ কোটি টাকা। এটা সিএসইর ইতিহাসের সেরা লেনদেন হিসেবে গন্য। বৃহস্পতিবারও ৩২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। পরপর দুই দিন এতো বেশি লেনদেন হওয়ার কারন আমি বলতে পারবো না। এটা আমার জানা নাই। এটা বলতে পারবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সিএসইর সূত্র মতে, গেল সপ্তায় একটি বাদে বাকী পাঁচ ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিএএসপিআই দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৬৫৭ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে। সিএসই ৫০ সূচক দশমিক ২০ শতাংশ, সিএসই৩০ সূচক দশমিক ১৫ শতাংশ, সিএসইসিএক্স সূচক দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ হাজার ৩১২ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৯০ দশমিক ৭২ পয়েন্টে, ১১ হাজার ১৫৪ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৭২ দশমিক ২২ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই এসএমইএক্স দশমিক ৪৬ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭০৩ দশমিক ৭০ পয়েন্টে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফরিদপুরের ভাঙ্গায় রেলিংয়ে মাইক্রোবাসের ধাক্কা, আগুনে প্রাণ গেল ৭ যাত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধঈদুল আযহায় চামড়া কিনতে ১০ ব্যাংক ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে