নিউজ ডেস্ক : বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলার বিনিময় হারের নামে লুটপাট করছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়িয়ে লুটের মালের মতো প্রতি ডলারে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা দাম রাখছে।
বুধবার (৭ জুন) দুপুরে ইআরএফ মিলনায়তনে ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত বাজেট পরবর্তী আলোচনার সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মো. রেফায়েতুল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, অনেকেই সুদ হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির নামিয়ে আনার কথা বলছে, আমি এটা বিশ্বাস করি না; সুদ হার বাড়িয়ে রাতারাতি কিছু একটা হয়ে যাবে এমন না। কারণ আমাদের ৮০ শতাংশ মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে। অর্থনীতির বড় অংশ ইনফর্মাল। সুদ হার বাড়ালে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। ডলারের দাম বাড়াই আর না বাড়াই ব্যাংকগুলো ইচ্ছা মতো দাম রাখছে।
তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ হচ্ছে। এনবিআর অ্যানালগই রয়ে গেছে। ভ্যাট আইনের জন্য অনেক টাকা খরচ করা হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। এটা করতে হবে। এনবিআরকে ডিজিটাল হতে হবে। একই সঙ্গে ডিজিটাল ও অ্যানালগ চলতে পারে না। রাজস্ব ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশন করতে হবে। উপজেলা পর্যন্ত করের অফিস খুলতে হবে। গ্রাম পর্যায়ে অনেক মানুষ আছে যারা কর দিতে পারে। গত ১৪ বছরে গ্রামের অনেক কাজ করেছে সরকার। এখন গ্রামের অর্থনীতি অনেক ভালো।
৪৩ ধরনের সেবা নিতে হলে আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক কর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা নিয়ে অনেকে আপত্তি আছে। দেশের ছয় কোটি মানুষের হাতে স্মার্ট ফোন। এ দুই হাজার টাকা কর দেওয়া কঠিন কিছু নয় বলে মনে করেন শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি।
তিনি বলেন, সরকারের রাজস্ব প্রয়োজন। এজন্য কর নেট বৃদ্ধির প্রয়োজন। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্র বাড়বে।
এনবিআর এফবিসিসিআইয়ের কথা শুনছে না অভিযোগ করেন জসিম উদ্দিন বলেন, এক সঙ্গে কাজ করতে হলে আমাদের কথা শুনতে হবে। এনবিআর-এর সঙ্গে আমাদের একটি টাস্কফোর্স আছে। কিন্তু মিটিং হয় না। মিটিং হলে আলাপ আলোচনা করে যেটা ভালো সেটা করা যায়। এইচএস কোড নিয়ে আমরা কথা বলেছিলাম, এটা নিয়ে কাজ করা যায়। একজন ভুল এইচএস কোডে মালামাল নিয়ে এসেছে এ জন্য দুই শতাংশ জরিমানা দিতে হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সরকারের জন্য কঠিন হলেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি বাড়ানো হয়েছে। খাদ্য ও কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হয়েছে। এগুলো আমাদের জন্য ভালো, এটা আমরা রেখেছি। আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে।
বাজারের অব্যবস্থাপনার বিষয়টি স্বীকার করেন পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পণ্য যে দামে বিক্রি হচ্ছে উৎপাদন বা কেনার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। বারবার উদ্যোগের পরও কাজে আসছে না।
পণ্য আমদানির বিষয়টি উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যেই আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে সব সময়ই ‘ট্রিগারে’ হাত রাখতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ছয় শতাংশ। এটা অর্জন করা কঠিন হবে। তারপরও চেষ্টা করা হবে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করেছি। এগুলো আমরা দেখব। বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ আমাদের সঙ্গে বন্ধু সুলভ আচরণ করছে।
সভায় মূল প্রবন্ধে র্যাপিডের এর চেয়ারম্যান ড. আ. রাজ্জাক প্রস্তাবিত বাজেটকে ভবিষ্যৎমুখী বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, এখন প্রধান সমস্যা মূল্যস্ফীতি। এ সমস্যা স্বীকার করে তা সমাধান উদ্যোগের কথা বলেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়। চলতি বছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বছর শেষে তিন লাখ ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা উঠতে পারে। এ বছর রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো যায়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে সম্ভব হবে না বলেও জানান ড. রাজ্জাক।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। এ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দেবে। ৭.৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি করা হয়েছে। এ জন্য যে হারে বিনিয়োগ লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে এটাও সম্ভব নয়।