নিউজ ডেস্ক: নির্মল বায়ু মানুষের অধিকার। ঢাকা শহরের বাসিন্দারা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত। জৈব জ্বালানি পোড়ানোর কারণে বায়ুতে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে, যা বায়ুর গুণগত মান নষ্ট করছে। তাই জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করা গেলে সবার জন্য নির্মল বায়ু ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
ঢাকায় এক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে বায়ুদূষণের ভয়াবহতা উল্লেখ করতে গিয়ে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এসব কথা বলেন।
শনিবার (১৭ জুন) পিআইবিতে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও আরবান প্রোগ্রাম, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ‘নির্মল বায়ু ও জ্বালানি নিরাপত্তায় নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার’ বিষয়ক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল। বিশেষ অতিথি ছিলেন পিআইবির পরিচালক (এডমিন) মো. জাকির হোসেন। বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকাল করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্রের (সিইআর) পরিচালক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী।
শরীফ জামিল বলেন, জ্বালানি একটি কৌশলগত পণ্য। টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানির অভাবে ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতার ফলে বর্তমানে জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে। জ্বালানি নিরাপত্তায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকল্প নেই। অন্যদিকে আমাদের মনে রাখতে হবে জ্বালানি নিরাপত্তা দিতে গিয়ে যেন পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলোর মধ্যে ৭০ শতাংশ দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি। এ বিষয়ে সব পর্যায়ে সচেতন হতে হবে।
মূল বক্তব্যে শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসগুলোর মধ্যে প্রধানতম হলো- সোলার ও বায়ুকল। এগুলোকে সঠিক গবেষণার মাধ্যমে কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা পৌঁছাতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। এটা অর্জন করার জন্য কাজ করতে হবে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উপ-পরিচালক মঞ্জু মারীয়া পালমা বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার এগিয়ে আসা উচিত।
ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তার পাশাপাশি নির্মল বায়ু নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য শক্তি প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। নির্মল বায়ু একটি মানবাধিকারের বিষয়। আমাদের শিশু ও তরুণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দ্রুত সরে আসতে হবে।
আর্থ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মাদ মামুন মিয়া বলেন, নির্মল বায়ু নবায়নযোগ্য জ্বালানি এখনকার সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, যা কি না জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রধান পদক্ষেপ। এ বিষয়ে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়কে দায়িত্বশীল করার পাশাপাশি সবাইকে সচেতন করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের (বিএনসিএ) সদস্যসচিব ও সেভ আওয়ার সি’র মহাসচিব মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক বলেন, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার অতি জরুরি। উপকূলীয় এলাকায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আমাদের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত হুমকি। সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও জ্বালানি নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দিতে হবে।
ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহন কুমার দাস বলেন, বাংলাদেশ এখন দূষণপ্রবণ দেশ। আমাদের একটা দায়িত্বহীনতার সংস্কৃতি আছে, যেগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিপর্যায়ে কিছু কাজ করা সম্ভব হলেও রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে এর সঠিক ব্যবস্থাপনা দরকার।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিক, গবেষক পরিবেশবাদী প্রমুখ। বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সমাপ্তি ঘোষণা করেন।