নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ তথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
রোববার (১৮ জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামগ্রিক মার্কেট ইকোনমিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য সময়োপযোগী ও দিকনির্দেশনা মূলক মুদ্রানীতি। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারের প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সমর্থনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ তথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
রোববার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ১ম ষান্মাসিকের জন্য (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩) নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এসময় ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের, এ কে এম সাজেদুর রহমান খান, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র আবুল বশরসহ গবেষণা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ এবং সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছে।
তিনি বলেন, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে একটি উন্নত ও বিকশিত পুঁজিবাজার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লিখিত হয়েছে। উন্নত ও বিকশিত পুঁজিবাজারের অভাবে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ ব্যাংকের অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। বন্ড মার্কেট এই বৃহৎ অর্থায়নের চাহিদা পূরণ করতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি খাত বন্ডের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে তাদের ব্যয় কমাতে পারে এবং পরিচালনাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়াও সরকার বন্ডের মাধ্যমে কম খরচে বাজেটের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ উত্তরণে পুঁজিবাজারে পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের দেওয়া ব্যাংকের শ্রেণিবদ্ধ ঋণের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত প্রভিশন ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করেছে। এছাড়াও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ না নিয়ে বন্ড ইস্যু করে অর্থের সংস্থান করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে।
মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারের প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সমর্থন পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ তথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারকে গুরুত্বারোপ করায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বাংলাদেশ ব্যাংককে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ডের ট্রেড সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে মার্কেট ইনফ্রাস্টাকচার মডিউল প্লাটফর্ম ব্যবহার করার জন্য গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। এছাড়া ব্যাংকিং কোম্পানি অ্যাক্ট ১৯৯১-এর সংশোধন অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে রয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে পুঁজিবাজার উন্নয়নে সহায়ক হবে। বিএসইসি বাজারের প্রবৃদ্ধির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে এবং এজন্য কিছু নীতিগত ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো– মিউচ্যুয়াল ফান্ড, (স্পেশাল ফান্ড যেমন পেনশন ফান্ড ব্যতীত) এর বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধি করা। বিএসইসি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য ন্যূনতম বিনিয়োগের সীমা ৬০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশে বৃদ্ধি করেছে। একটি শক্তিশালী ও গতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের এই আশাবাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে পুঁজিবাজার উন্নয়নে একযোগে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়ন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি কার্যকর বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ দুটো বিষয়ের ওপর ডিএসইও দেশের নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। ডিএসই মনে করে, এ দুটো উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গেলে যথাযথ কৌশল প্রণয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিকাশে সারা বিশ্বে নীতি-সমর্থন এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকে, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সে ধরনের ভূমিকাই রয়েছে।