নিজস্ব প্রতিবেদক : তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট (বিগ) ২০২৩। গ্র্যান্ড ফিনাল অনুষ্ঠানে সেরা ৫২টি স্টার্টআপকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘স্বাস্থ্য সেবা’।
১৭ জুন রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এর গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়ী ৫২টি স্টার্টআপকে সর্বমোট ৭ কোটি টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে।
উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপদের উদ্ভাবনী ধারণাগুলো প্রদর্শন করা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে আইসিটি ডিভিশন, ইনোভেশন আইডিয়া অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ একাডেমি, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের সহযোগিতায় যাত্রা শুরু করে বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্ট।
এবারের বিজয়ী ‘স্বাস্থ্য সেবা’ এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে একজন মানুষ তার রোগ বা সমস্যা অনুযায়ী নিজের এলাকার বা দেশের যে কোনো শহরে সেবাদানকারী সঠিক চিকিৎসককে খুঁজে নিতে পারেন। চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা এবং তিনি কি কি রোগ বা সমস্যার জন্য সেবা দিয়ে থাকেন; সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। রোগী তার চাহিদামতো চিকিৎসকের সঙ্গে ফিজিক্যাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা ভিডিও কনসালটেশন অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং করতে পারেন।
স্বাস্থ্য সেবার যাত্রা শুরু ২০২১ সালে। ২০২২ এর মে মাসে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাজারে আসে স্বাস্থ্য সেবার ওয়েবসাইট ও অ্যাপ।
‘স্বাস্থ্যা সেবা’ কোম্পানির ফাউন্ডার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াজিহা ইসলাম তাসিন বলেন, দেশের একমাত্র অনলাইন হেলথ কেয়ার প্ল্যাটফর্ম, যেখানে একই সঙ্গে ফিজিক্যাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা ভিডিও কনসালটেশন অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং করা যায়। চিকিৎসক নির্বাচন করার পর তার সাথে ফিজিক্যাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা ভিডিও কনসালটেশন অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং করতে সময় লাগে এক মিনিটেরও কম। ‘স্বাস্থ্য সেবা’ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে তার সাথে দেখা করার জন্য ১৫ মিনিটের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় না। ‘স্বাস্থ্য সেবা’ চিকিৎসক নির্ধারিত কনসালটেশন ফি এর বাইরে সেবাগ্রহীতা থেকে কোনো টাকা নেন না।
এছাড়াও স্বাস্থ্য সেবাতে রয়েছে ২৪ ঘণ্টা ইমার্জেন্সি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এবং রেগুলার চেকআপের জন্য অন-কল ডক্টর অ্যাট হোম সার্ভিস। স্বাস্থ্য সেবা গত ১ বছর ধরে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাজুড়ে ঢাকায় ৩০ মিনিটের মধ্যে এবং দেশের ৬৪টি জেলায় ৪৫ মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস দিয়ে আসছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সেবাতেই পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি।
ডক্টর অ্যাপয়েন্টমেন্ট সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নিয়ে দেশের ও বিদেশের ১০৭টি হাসপাতাল এবং হেলথ কেয়ার সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে স্বাস্থ্য সেবা।
স্বাস্থ্য সেবার ফাউন্ডার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াজিহা ইসলাম তাসিন বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট (বিগ) ২০২৩ এ অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানান, এ বছরের ১৮ এপ্রিল আমরা পিচ ডেকসহ অ্যাপ্লাই করি। প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ৩০০ জনকে বাছাই করা হয়। বাছাই করা এই ৩০০ স্টার্টআপকে অনলাইন পিচিংয়ের জন্য ডাকা হয়। সেখান থেকে নির্বাচিত হয়ে আমরা জায়গা করে নেই সেরা ১০৫ এ।
স্বাস্থ্য সেবার সিইও মো. আলী মহসিন বলেন, সেরা ১০৫টি স্টার্টআপ থেকে একজন করে নিয়ে তিনদিনের বুটক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয় যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে। আমাদের কোম্পানি থেকে বুটক্যাম্প-এ অংশ নেন কো-ফাউন্ডার ও চিফ অব প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিং প্রসূন ব্যাপারী।
সেখানে তিন দিনব্যাপী ১১টি সেশনে ব্যবসার কনসেপ্ট, ফিজিবিলিটি, স্ট্রাটিজি, ইমপ্লিমেন্টেশন, টিম ম্যানেজমেন্ট, স্টোরি টেলিংয়ের ওপর বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শেষ দিন বিভিন্ন ইনভেস্টরের সামনে পিচ করার সুযোগ করে দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ১৪, ১৫ ও ১৬ জুন অনুষ্ঠিত হয় ফাইনাল পিচিং রাউন্ড। সেখান থেকে সেরা ৫২টি স্টার্টআপ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এর মাধ্যমে আমরা শুধু ১০ লাখ টাকা অনুদান-ই পাইনি, ব্যবসা সম্পর্কে বিভিন্ন মেন্টরদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতেও পেরেছি। তাছাড়া আমাদের মতো স্টার্টআপদের কাছে বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট একটি জাতীয় পর্যায়ের স্বীকৃতি এবং সম্মাননা।
বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট (বিগ) ২০২৩ গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন আইডিয়ার প্রজেক্ট ডিরেক্টর মো. আলতাফ হোসেন, বিগ ২০২৩ এর কো-অর্ডিনেটর সিদ্ধার্থ্য গোস্বামী, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামী আহমেদ এবং আইসিটি ডিভিশনের সচিব মো. শামসুল আরেফিন।