ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রথমবারের মত ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের আম। বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের লাভের পাশাপাশি সমৃদ্ধ হবে জেলার ও দেশের অর্থনীতি।
আর এ রপ্তানির মাধ্যমে ভবিষ্যতে মানসম্মত আম বিদেশে রপ্তানির পথ সুগম হবে বলে আশা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। জেলায় ধান, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রকম সবজি ও ফল উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত পণ্য জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আগে আলু, করলাসহ কয়েকটি পণ্য রপ্তানি হলেও ফল রপ্তানি হয়নি। এবারে প্রথম আম্রপালি, বানানা ম্যাংগো ও বারি আম-৪ জাতের ৫০০ কেজি আম ইংল্যান্ডে রপ্তানির মাধ্যমে বিদেশে আম রপ্তানি শুরু হয়।
মানসম্মত আম উৎপাদন, ন্যায্য মূল্য ও রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে এ জেলা থেকে আগামীতে বিপুল পরিমাণ আম রপ্তানি হবে বলে আশা কর্তৃপক্ষের।
নিজের বাগানের উৎপাদিত আম ইউরোপে রপ্তানি করতে পেরে খুশি বাগান মালিকরা।
বাগান মালিক পলাশ চন্দ্র বলেন, আমার বাগানের আম বিদেশে পাঠাতে পেরে আমি অনেক গর্বিত। এই জেলার আম অনেক সুস্বাদু। আম রপ্তানি হলে জেলায় আম চাষ আরও বাড়বে।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড লিংক এর সিইও কাওসার আহমেদ রুবেল বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন বাগান প্রদর্শন করে এখানকার আম রপ্তানি উপযোগী বলে আমরা মনে করি। এবারই প্রথম এই জেলা থেকে আম আমদানি করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি আম চাষিরা আমাদের গুণগত মানসম্পন্ন আম সরবরাহ করবে। তাহলে বিদেশে আমাদের আমের চাহিদা বাড়বে সেই সঙ্গে আমের বাজার আরও প্রসারিত হবে।
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আরিফুর রহমান বলেন, গত বছরের চেয়ে এবারে দ্বিগুণ আম রপ্তানি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ বছরে প্রকল্পের শুরু হলো, আর এবারে ঠাকুরগাঁওয়ের আম ইউরোপের বাজারে যাবে। এর মাধ্যমে বাগান মালিকদের পাশাপাশি এ শিল্পে যারা আছেন তারা সবাই লাভবান হবেন বলে আশা করছি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সুভক্ষণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপে আম পাঠানো হচ্ছে। আর ক্রমান্বয়ে জেলায় আম বাগান বাড়ছে। রপ্তানির মাধ্যমে চাষিরা অধিক মূল্যের পাশাপাশি স্থানীয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এতে করে জেলার অর্থনীতির পরিবর্তন আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার আম বাগানি পলাশ চন্দ্রের বাগান পরিদর্শন করেন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। পরে সে বাগান থেকে নেওয়া তিনটি জাতের ৫০০ কেজি আম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে বিদেশে আম রপ্তানির সূচনা হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় ৭৯৫০ একর জমিতে ৪২০১টি বাগানে ২২ জাতের আম আবাদ করা হয়েছে। যার মধ্যে এবারে ৫০ থেকে ১০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, অন্যান্য জেলায় আম যখন শেষের দিকে তখন আমাদের জেলার আম হার্ভেস্ট করা শুরু হয়। আমাদের অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এবারে প্রথম বিদেশে রপ্তানির সুযোগ হলো। আগামীতে এটি আরও বেড়ে মানসম্মত আম রপ্তানির পথকে সুগম করবে। সেই সঙ্গে রপ্তানি উপযোগী আম উৎপাদনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।