নিউজ ডেক্স: ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য শুরু হওয়ায় প্রথম যেসব কোম্পানি এই সুবিধা গ্রহণ করেছে, তার একটি বগুড়ার তামিম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় মুদ্রায় এলসি খুলে সে দেশে ২০০ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চালের কুঁড়ার তেল বা রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানি করতে যাচ্ছে। এই তেল কিনছে ভারতের এশিয়ান অয়েল মিলস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যারা এই প্রথম ডলারের বদলে রুপিতে মূল্য পরিশোধ করবে।
মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে রুপি ব্যবহারের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই চালের কুঁড়ার তেল রপ্তানির জন্য ভারতীয় রুপিতে খোলা ঋণপত্র তামিম অ্যাগ্রোর কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তামিম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী জানান, বগুড়ায় তাঁদের কারখানায় কুঁড়ার তেলের উৎপাদন সক্ষমতা প্রতি মাসে গড়ে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার মেট্রিক টন চালের কুঁড়ার তেল ভারতে রপ্তানি করা হয়।
শাহজাহান আলী প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘এত দিন আমাদের পণ্যের জন্য মার্কিন ডলারে মূল্য পরিশোধ করেছেন ভারতের আমদানিকারকেরা। এখন ডলারের বদলে ভারতীয় মুদ্রা রুপিতে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করবেন তাঁরা।’
শাহজাহান আলী জানান, প্রথম পর্যায়ে ২০০ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চালের কুঁড়ার তেল বা রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানির জন্য স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় এলসি খোলা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ও বেসরকারি ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেড এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংকের মাধ্যমে রুপিতে বাণিজ্য করা যাবে। শুরুতে রপ্তানিতে বগুড়ার তামিম অ্যাগ্রো এবং ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে নিটল টাটা গ্রুপ রুপিতে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে যাচ্ছে।
তামিম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০১৫ সালের দিকে ‘ধানী’ ব্র্যান্ডের রাইস ব্র্যান অয়েল তৈরি শুরু করে। দেশের বাজারে পরিশোধিত তেল বাজারজাত করার পাশাপাশি পরের বছর তারা ভারতে অপরিশোধিত চালের কুঁড়ার এই তেল রপ্তানি শুরু করে।
বাংলাদেশ রাইস ব্র্যান অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, দেশে চালের কুঁড়ার তেল উৎপাদনের ১৭ কারখানার মধ্যে বগুড়াতেই আছে ৬টি। এর মধ্যে একটি কারখানায় উৎপাদিত চালের কুঁড়ার তেল পরিশোধন করে দেশে বাজারজাত করা হয়। বাকি পাঁচটি কারখানায় উৎপাদিত অপরিশোধিত চালের কুঁড়ার তেল ভারতে রপ্তানি করা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর গড়ে ২ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত চালের কুঁড়ার তেল রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে। ভারতের বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত চালের কুঁড়ার তেলের রপ্তানি মূল্য প্রায় ১ হাজার মার্কিন ডলার। সেই হিসাবে চালের কুঁড়ার তেল রপ্তানি থেকে বছরে আয় হয় ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
দেশের রাইস ব্র্যানের ১৭ কারখানার মধ্যে বগুড়াতেই আছে ৬টি। এর মধ্যে পাঁচটি কারখানায় উৎপাদিত অপরিশোধিত চালের কুঁড়ার তেল ভারতে রপ্তানি হয়। এ পাঁচটি কারখানা প্রতিবছর গড়ে ১০ কোটি ডলারের চালের কুঁড়ার তেল রপ্তানি করে।
এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, রাইস ব্র্যান অয়েলের প্রধান কাঁচামাল চালের কুঁড়া, যা সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন চালকল থেকে। কিন্তু চাল না থাকায় এখন অধিকাংশ চালকলের কার্যক্রম বন্ধ। এতে চালের কুঁড়ার সংকট তৈরি হয়েছে। কারখানামালিকেরা বলছেন, বাজারে নতুন আমন ধান উঠতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। চালের কুঁড়ার জন্য সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে দেশি ভোজ্যতেলের বাজার ধরতে বগুড়ার শেরপুরে মজুমদার প্রোডাক্টস উৎপাদনে যায়। পরে ২০১৬ সালে উৎপাদিত চালের কুঁড়ার তেল ভারতে রপ্তানি শুরু করে। ‘স্বর্ণা’ ব্র্যান্ডের চালের কুঁড়ার তেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মজুমদার প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিত্ত মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কারখানায় দৈনিক ৯০ মেট্রিক টন ও ৭০ মেট্রিক টন তেল উৎপাদনের জন্য দুটি ইউনিট রয়েছে।’
রাইস ব্র্যান অয়েল পরিশোধনের ব্যবস্থা বেশির ভাগ মিলে না থাকায় ভারতে রপ্তানি হয় ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেল। সে দেশে তা পরিশোধনের পর বোতলজাত হয়ে বাজারে বিক্রি করা হয় ভোজ্যতেল হিসেবে।
যেভাবে তৈরি হয় কুঁড়ার তেল ধানের তুষ তুলে ফেলার পর চালের ওপরের লালচে আবরণই মূলত রাইস ব্র্যান। বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই রাইস ব্র্যান থেকে বের করা হয় অপরিশোধিত তেল। এরপর পরিশোধনের মাধ্যমে তৈরি হয় কুঁড়ার তেল, যা ভোজ্যতেল হিসেবে বাজারজাত করা হয়।
রাইস ব্র্যান থেকে অপরিশোধিত তেল নিষ্কাশনের পর পাওয়া যায় ডি-অয়েলড রাইস ব্র্যান। এটি ফিড মিলের কাঁচামাল, যা পশুপাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি মাফুজুল ইসলাম বলেন, বগুড়ার পাঁচ-ছয়টি প্রতিষ্ঠান ভারতে চালের কুঁড়ার তেল রপ্তানি করছে। এত দিন রপ্তানি মূল্য পরিশোধ করা হতো মার্কিন ডলারে। এখন ভারতীয় রুপিতে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করায় ডলার–সংকটে ব্যাংকে এলসি খোলা নিয়ে জটিলতায় পড়তে হবে না।