- ৭২ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি মালিকানাধীন দেশের অন্যতম আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন সব সূচকের এগিয়ে যাচ্ছে। ৭২ বছরের ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করেছে। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্জিত মুনাফার পরিমাণ প্রায় ২ শত ৬৪ কোটি টাকা। এর আগের ২০২১-২২ আর্থ বছর ছিল ২৪৯ কোটি টাকা সে হিসাবে ১৫ কোটি টাকা বেড়েছে। শ্রেণীকৃত ঋণ হ্রাস করার ক্ষেত্রে বিরল সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন (বিএইচবিএফসি)। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ দিনে প্রতিষ্ঠানটির শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ মাত্র ১ শত ৬০ কোটি টাকা। মোট ঋণের বিপরীতে এর হার মাত্র ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিএইচবিএফসির শ্রেণিকৃত ঋণ ছিল মোট ঋণের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ ঋণ আদায়ে গত বছর থেকে প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
বিশিষ্ট ব্যাংকার মো. আব্দুল মান্নান গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন (বিএইচবিএফসি)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে কাজে যোগদান করেন। এর আগে রাষ্ট্রায়াত্ব কর্মসংস্থান ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে অত্যন্ত সফলতার সাথে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিএইচবিএফসি’র প্রধান নির্বাহীর এ পদে দায়িত্বভার গ্রহণ পর শুধুমাত্র শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়েই নয়, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে ঋণ মঞ্জুরী, ঋণ বিতরণ, অশ্রেণীকৃত ঋণ আদায় এবং বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তিতেও। এ অর্থবছরে বিএইচবিএফসি প্রতিষ্ঠানটির সর্বকালের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে মোট ৮ শত ৪৬ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর ও ৬ শত ৯৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। ঋণ মঞ্জুর ও ঋণ বিতরণে এ অর্থবছরে উভয় ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ১৮ শতাংশেরও বেশি।
সামষ্টিক ঋণ আদায়ও প্রতিষ্ঠানটির জন্মলগ্ন থেকে এ বছরই সবচেয়ে বেশি যার পরিমাণ ৭ শত ১৬ কোটি টাকা। এ বছর ঋণ আদায়ে প্রবৃদ্ধি প্রায় ১০ শতাংশ। ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা নির্দেশক সকল সূচকে রেকর্ড সাফল্যের ফলে এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফাও অর্জন করেছে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব এ প্রতিষ্ঠানটি। এবিষয়ে বিএইচবিএফসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিশ্রমের ফলে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এমডি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। তাই গ্রাহকদের স্মার্ট সেবাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত আরও আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও গ্রাহকবান্ধব করে তুলতে সচেষ্ট রয়েছি। এমডি আব্দুল মান্নান আরও বলেন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইএসডিবি) থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পল্লী ও পেরি-আরবান এলাকায় প্রয়োজনীয় মৌলিক সুবিধাসম্বলিত টেকসই ও উন্নত মানের ২ হাজার গৃহ ইউনিট বিনির্মানে এ ঋণ সহায়তা প্রদান করবে। দেশের এসব এলাকার স্বল্প ও মধ্যম আয়ের ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ এসব গৃহ ইউনিটে বসবাসের প্রত্যক্ষ সুবিধা ভোগ করবে। চাষযোগ্য জমি রক্ষাসহ জলবায়ু সহিষ্ণু ও পরিবেশবান্ধব গৃহনির্মাণেও বড় ভূমিকা রাখবে এ প্রকল্প।
এদিকে দেশের গৃহায়ণ সমস্যার সমাধানে জনসাধারণকে গৃহ নির্মাণ খাতে আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের উদ্দেশ্যে ১৯৫২ সালে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (বিইচবিএফসি) পুনর্গঠিত হয়। কর্পোরেশনের সদর দফতর ঢাকায় অবস্থিত। বর্তমানে সারাদেশে ৬৪টি জেলায় অফিস রয়েছে। ৭২টি শাখা অফিস রয়েছে। মানুষের ৫টি মৌলিক চাহিদার অন্যতম হলো বাসস্থান। জনবহুল এ দেশে আবাসন চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে আবাসনের সংস্থান কঠিন হয়ে পড়ছে। এই প্রকট আবাসিক সমস্যার সমাধানে সহায়তা প্রদান করাই বিএইচবিএফসির মূল উদ্দেশ্য। গৃহায়ণ খাতে অর্থ সংস্থানের ক্ষেত্রে বিএইচবিএফসি কয়েক যুগ ধরে এ দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করে আসছে।