লালমনিরহাট প্রতিনিধি : এবারও কমেছে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরের রাজস্ব। গত চার অর্থ বছর ধরে এ বন্দরে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় হচ্ছে না। ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা কম আমদানি করায় এ সঙ্কট আরও প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে।
বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশন দিয়ে সব চেয়ে বেশি পাথর আমদানি হয়। বৈশ্বিক সমস্যা, ডলার সংকটে আমদানি কম ও এ বন্দর দিয়ে উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ না থাকায় কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আসছে না।
একাধিক আমদানি-রপ্তানিকারক ও কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট জানায়, ডলার সংকটে আমদানি-রপ্তানিতে অনিশ্চয়তা, পণ্য আমদানিতে ব্যয় বৃদ্ধি, পাথর সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ উন্নয়ন কাজ বন্ধের কারণে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত। এতে ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে পারেনি। আমদানি-রপ্তানি না হলে রাজস্ব এমনিতেই কম হবে।
কাস্টমস্ সূত্র জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ১৩১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আয় হয়েছে ৯৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৭ কোটি ২২ লাখ টাকা কম আয় হয়েছে। এর আগে গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে এ স্টেশনের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আয় হয় ৯১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ওই বারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা কম আয় হয়। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আয় হয় ১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা কম আদায় হয়। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। আয় হয় ৫৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ওই অর্থ বছরেও রাজস্ব আয় কম হয় ৪৮ কোটি ৮ লাখ টাকা।
অপরদিকে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ৫৬ কোটি ১০ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারণ করলেও আয় হয় ৫৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। কম আয় হয় ৫১ লাখ টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ কোটি টাকা। ওই অর্থ বছরে ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বেশি আয় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। রাজস্ব আয় কম হয় ৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
বুড়িমারী স্থলবন্দরে সিএনএফ ব্যবসায়ী বকুল হোসেন বলেন, গত ছয় মাস ধরে স্থলবন্দরের ডলার সংকটে আমদানি কমে গেছে। পাশাপাশি জায়গার সংকট। ভারতীয় ও বাংলাদেশি ট্রাকে পুরো স্থলবন্দর যানজট সৃষ্টি হয়। সঠিক সময়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে মালামাল পরিবহন করা সম্ভব হয় না।
স্থলবন্দরে ট্রাকচালক মুকুল হোসেন বলেন, মালামাল পরিবহন করা খুবই কষ্টকর। স্থলবন্দরে ঢুকলেই যানজটের অবস্থা কাহিল। সঠিক সময় সঠিক জায়গায় মালামাল পরিবহন করা কষ্টকর।
বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি রুহুল আমীন বাবুল বলেন, দফায় দফায় ডলার সংকটে ব্যবসায়ীরা আমদানি করছেন। এতে সরকারের রাজস্ব কমে গেছে।
বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের (কাস্টমস্) ডেপুটি কমিশনার আব্দুল আলীম বলেন, আমদানি কম হওয়ার কারণে রাজস্ব আয় কম হচ্ছে।’