শেয়ারবাজারে টানা দর পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার সোমবার সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসও দর পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এই নিয়ে টানা তিন কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এদিকে টানা দরপতনের কারনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। এবিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্সঅ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এখন দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন যাবত পতনের ধারায় রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। সে কারনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা অস্থিরতা বাড়ছে। হাফিজ বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারটা টোটালটা গেমলার নির্ভর মার্কেট এটা হওয়া উচিত ছিলনা। সেকারনে শেয়ারবাজারে প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব রয়েছে। সে কারনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কে পড়েছে। এই আতঙ্কের কারনে শেয়ার বিক্রির মহোৎসবে মেতেছেন বিনিয়োগকারীরা। হাফিজ বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রভাব আমাদের শেয়ারবাজারে এখনো আছে। হাফিজ বলেন, আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ না। আশাকরি বাজার সামনে ভালো হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি ডিএসই সিএসই মার্চেন্ট ব্যাংক একসাথে কাজ করলে সামনে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
শেয়ারবাজারের এ দরপতন সম্পর্কে এক বিনিয়োগকারী বলেন, বাজার ভালো দেখে নতুন করে কিছু টাকা ঢুকিয়ে ছিলাম। একটি কোম্পানির শেয়ার দাম কয়েকদিন ধরে বাড়ছিল। যে কারণে কোম্পানিটর শেয়ার কিনেছি। কিন্তু আমি কেনার পর থেকেই দাম কমছে।
এদিকে রোববার লেনদেন হওয়া ব্রোকার হাউজগুলোর ট্রেড সেটেলমেন্ট (অর্থাৎ লেনদেনের শেয়ার নিষ্পত্তি) সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসই জানায়, রোববার রাত থেকে গতকাল ট্রেড শুরু হওয়ার আগেই সব ব্রোকার হাউজের সমস্যার সমাধান হয়েছে এবং সবাই গতকাল তাদের ট্রেডিং কার্যক্রমে সফলভাবে অংশগ্রহণ করেছে। ডিএসইর উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং যথাসময়ে নির্বিঘ্নভাবে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে শেষ হয়। রোববার ট্রেড সুসম্পন্ন হওয়ার পর টেকনোলজি প্রোভাইডার ফ্ল্যাক্স থ্রেডের কারিগরি ত্রুটির কারণে ৬৩টি ব্রোকার হাউজ ফ্ল্যাক্স থ্রেড সফটওয়্যার থেকে তাদের ট্রেড সংক্রান্ত ডাটা ডাউনলোড করতে না পারায় তাদের ট্রেড সেটেলমেন্ট সংক্রান্ত কার্যক্রম ব্যাহত হয়। সমস্যা সমাধানের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইসিটি টিম, ম্যানেজমেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার ভেন্ডর অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। রোববার রাত থেকে আজ ট্রেড শুরুর আগেই সব ব্রোকার হাউজের সমস্যার সমাধান হয় এবং সবাই আজ তাদের ট্রেডিং কার্যক্রমে সফলভাবে অংশগ্রহণ করে।
এ ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ডিএসই কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার ভেন্ডর ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬.১৫ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ২৯৯.৬৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১.৯৫ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫.৪৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৬৬.২৭ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ১৩৮.৪০ পয়েন্টে। ডিএসইতে ৩৩৬টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২৮টির বা ৮.৩৩ শতাংশের। এছাড়া দর কমেছে ১৪২টির বা ৪২.২৬ শতাংশের এবং শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬৬টির বা ৪৯.৪০ শতাংশের।
ডিএসইতে ৪৬৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৫০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বেশি। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকার।
দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪০.৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬২৪.৩৮ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলো মধ্যে সিএসসিএক্স ২৪.১২ পয়েন্ট, সিএসই-৫০ সূচক ১.৯৬ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১৬.৪৬ পয়েন্ট এবং সিএসআই ০.৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ১৩৩.৬৩ পয়েন্টে, এক হাজার ৩০৭.৫৪ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩১৯.৩৪ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৬৯.৩৩ পয়েন্টে।
সিএসইতে ১৫৪টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২৫টির, কমেছে ৭৪টির এবং ৫৫টি কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে মোট ১০ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

শেয়ারবাজারে এমন টানা দরপতন দেখা দেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন যে দরপতন হচ্ছে তাতে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কয়েকদিনের টানা উত্থানের কারণে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেশ বেড়ে গেছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ কারণে বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়েছে। শেয়ারবাজারের এ দরপতন সম্পর্কে বিনিয়োগকারী জামান বলেন, বাজার ভালো দেখে নতুন করে কিছু টাকা ঢুকিয়ে ছিলাম। একটি কোম্পানির শেয়ার দাম কয়েকদিন ধরে বাড়ছিল। যে কারণে কোম্পানিটর শেয়ার কিনেছি। কিন্তু আমি কেনার পর থেকেই দাম কমছে। এছাড়া আগে যেসব শেয়ার কেনা আছে, সেগুলোর বেশিরভাগ ফ্লোরে আটকে আছে। কবে এসব শেয়ার বিক্রি করতে পারবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে যেভাবে দরপতন হচ্ছে তাতে একটু আতঙ্কে আছি। এ বাজার থেকে মুনাফা করা মুশকিল হয়ে গেছে। কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ার দাম হু হু করে বাড়ছে। কিন্তু বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। এটা ভালো বাজারের লক্ষণ না।
এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, বাজারে এখন যে দরপতন হচ্ছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ দরপতনের আগে বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল বেশ কয়েকদিন। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ প্রফিট টেকিং করছেন। আর প্রফিট টেকিংয়ের সময় কিছুটা মূল্য সংশোধন হওয়া স্বাভাবিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউত্তাল সাগরে ইলিশ শূন্য ট্রলার নিয়ে তীরে ফিরছেন জেলেরা
পরবর্তী নিবন্ধমিডল্যান্ড ব্যাংক ও প্লাসিড এনকে করপোরেশনের মধ্যে চুক্তি