আমাদের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত কতকিছু কেনাকাটা করি এবং তার পেমেন্ট আমরা পরিশোধ করছি ক্যাশ, কার্ড, বিকাশ, নগদ অথবা অন্য কোন মাধ্যমে। মানুষ চায় সহজে কম খরচে সেবা। ফিনটেক এবং মোবাইল ফিন্যানসিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অর্গানাইজেশন গুলো দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে।
আপনি বিকাশের কথাই ধরুন না। বিকাশ ব্যয় বহুল মাধ্যম। তারপর ও বিকাশ তার ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করতে পারছে দিন দিন। কিন্তু কেন? কারন, মানুষ চায় সার্ভিস। বিনিময়ে বাড়তি খরচ করতে ও আপত্তি ইেন। অন্যদিকে যারা পেমেন্ট নিচ্ছে তারাও আপনাকে চাপিয়ে দিতে পারছে যে আমাকে অমুক পদ্ধতিতে পেমেন্ট দিতে হবে।
একটা বাস্তব উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। বাচ্চার বিআইএসসি স্কুলে ভর্তির জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ বলে দিলেন বিকাশে করে তেপান্ন হাজার টাকা নিয়ে আসতে হবে। তারা ক্যাশ নেয় না। এবারে পেমেন্ট দিতে গিয়ে দেখি আমকে প্রায় ৬/৭ শত টাকা চার্জ দিতে হলো। বিকাশ এটা করতে পেরেছে কারন স্কুল কর্তৃপক্ষ কম খরচে নির্ভুল হিসাব পাচ্ছে। বাড়তি একজন ক্যাশিয়ার রাখা লাগছে না। অবশ্য, এফিসিয়েন্সির মাধ্যমে যারা সার্ভিস দিবে কম্পিটিশনে তারাই টিকে থাকবে। এখানে পূর্বের উদাহরণে ফিরে যাই। একটা ব্যাংকের মাধ্যমে যদি এই পেমেন্ট সার্ভিস দেওয়া যায় তাহলে অনেক কম বা কোন খরচ ছাড়াই এই সার্ভিস নেওয়া যাবে। এবং এটা বর্তমানে আছেও। শুধু একাউন্ট ওপেনিং কার্যক্রম আরো সহজ করার ব্যপার এখনো রয়ে গিয়েছে।
ক্যাশনির্ভর সোসাইটি েেক মানুষ মুভ করছে ক্যাশলেস অথবা লেসক্যাশ সোসাইটির দিকে। মানুষের পকেটে শুধু থাকবে একটা মোবাইল। এবং সেটা দিয়ে মানুষ চাইবে তার সমস্ত পেমেন্ট দিতে এবং নিতে। একজন রিকশাওয়ালা েেক শুরু করে বিরাট বিরাট নামীদামী সব জুয়েলারি শপ সবক্ষেত্রেই পেমেন্ট দেওয়া যাবে একটা মোবাইলের মাধ্যমে। এই সার্ভিস যারা দ্রুত চালু করতে পারবে তাদের ব্যবসা ততো ভালো হবে এবং সাস্টেইন করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইধহমষধ ছজ নামে সর্বজনিন একটা পেমেন্ট প্লাটফর্ম চালু করেছে। অদূর ভবিষ্যতে সমস্ত চঙঝ (চড়রহঃ ড়ভ ঝধষব) ব্যবসা এই ইধহমষধ ছজ এর কাছে মার খাবে। এর মাধ্যমে পেমেন্ট দেওয়া খুব ই সহজ এবং খরচ ও নেই।
একটু অন্য প্রসংগে আসি। আমাদের দেশে এখনো ক্যাশ লেনদেন অনেক বেশি। কারণ কি ? মূল কারণ যেটা আমি মনে করি সেটা হচ্ছে অবৈধ আয়। আবার কিছু শিক্ষিত মানুষের প্রযুক্তির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অসামর্থ। সাথে অশিক্ষিত বিরাট একটা জনগোষ্ঠী প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম না। এটা ও াকবে না। জেনারেশন চেনজ এর সাে সাথেই প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বেড়ে যাবে। ডিজিটালাইজেশনই এগুলোকে উৎপাটন করে ফেলবে। সব কিছু চলে যাবে একটা অ্যাপসে। সেই পেমেন্ট সার্ভিস।
যেহেতু মানুষ ঘরে বসেই তার কাংখিত প্রডাক্ট চাইবে তাই সেটা অন্য কাউকে বহন করে নিয়ে আসতে হবে। সুতরাং কিছু পার্সেল সার্ভিস প্রভাইডার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। মানুষের শপিংমলে যাওয়ার প্রবনতা কমে যাবে। ঘরে বসেই অর্ডার করে তার প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পেয়ে যাবে এবং এখনই অনেক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
কিছু ধোকাবাজ মানুষের কারণে অনলাইন প্লাটফর্মটা এখন ও অতোবেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি। এক সময় অব্শ্যই অনলাইন প্লাট ফর্ম আরো বেশি ফ্লারিশ করবে। এখনকার মত ক্যাশ অন ডেলিভারি থাকবে না। থাকবে পেমেন্ট অন ডেলিভারি এবং সেটা ইধহমষধ ছজ এর মত যেকোন সহজ মাধ্যমে হবে।
দিন শেষে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, ব্যাক্তি সকলেই ক্যাশ ব্যবস্থাপনার ঝামেলা েেক মুক্ত থাকতে চাইবে। অতিরিক্ত লোকবল, অধিক রিস্ক, সব মিলিয়ে ক্যাশ লেনদেন শুন্যের কাছাকাছি চলে আসবে। এর জায়গা নিবে ডিজিটাল পেমেন্ট। ডিজিটাল পেমেন্ট দেওয়া এবং নেওয়ার সার্ম যাদের থাকবে না অটোমেটিকেলি তারা বৈশ্বিক প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে পড়বে। আবার যে প্রতিষ্ঠানগুলো পেমেন্ট দেওয়া এবং নেওয়ার প্লাটফর্ম যতো বেশি করতে পারবে তারা ততো ভালো করবে। মানুষের পকেটে তখন কোন ওয়ালেট থাকবে না, থাকবে ডিজিটাল ওয়ালেট। টাকা মানুষ ব্যাংকের বাইরে শুধু ফিনটেক প্রতিষ্ঠানে রাখবে। এজন্য ফিনটেক প্রতিষ্ঠানগুলোই ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ হয়ে ঊঠছে।
একটা জিনিস পরিষ্কার, ফিনটেক অর্গানাইজেশন গুলো কিন্তু এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এবং চুপিসারে ব্যাংকের প্রতিদ্ধন্দী হয়ে যাচ্ছে। আমরা একটু একটু করে বুজতে পারছি। বেশি দিন নেই এরা ব্যাংকের উপর চোখ রাংগাবে। যে ব্যাংক এটা বুঝতে পারবে এবং এটা নিয়ে কাজ করবে তারাই ভালোভাবে টিকে াকবে। অন্যথায় দিন দিন এদের প্রফিট ও ব্যবসা কমতে থাকবে। এবং এক সময় অন্য ব্যাংকের সাে মার্জ করতে বাধ্য হবে।
লেখক: এসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, ব্যাংক এশিয়া।