বাংলাদেশ-কোরিয়ার বাণিজ্য ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে: পার্ক ইয়ং

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ও কোরিয়ার দ্বিমুখী বাণিজ্য গত বছর ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কোরিয়া বাংলাদেশ ইকোনোমিক কো-অপারেশন: শেয়ারিং ডেভেলপমেন্ট এক্সপেরিয়েন্স অ্যান্ড এক্সপ্লোরিং অপর্চুনিটিজ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে ঢাকাস্থ দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাস, কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি (কোটরা) ও কোরিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কেবিসিসিআই)।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সমৃদ্ধি ও বিকাশের শুরু থেকেই দক্ষিণ কোরিয়া ঢাকার সঙ্গে কাজ করছে। ১৯৭৯ সালে কোরীয় কোম্পানি দায়েউর সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে এ যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর বিভিন্নভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিকশিত হয়েছে। যাতে লাভবান হয়েছে দুই দেশের অর্থনীতি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, গত বছর দ্বিমুখী বাণিজ্য ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) নিয়ে আলোচনা করছে। যদি এ চুক্তি সম্ভব হয়, তাহলে বিভিন্নভাবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সমৃদ্ধ হবে। সঞ্চিত পরিমাণের দিক থেকে বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগ পঞ্চম বৃহত্তর। আমি আগেই বলেছি, ১৯৭০ দশকের পর থেকে বাংলাদেশে কোরীয় তৈরি পোশাক খাত প্রবেশ করেছে। সাম্প্রতিক মোটরগাড়ি, মোবাইলফোন, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি শিল্পে স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ ভিত্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো সুনির্দিষ্টভিত্তিক ব্যক্তিগত মালিকানাধীন রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চল কেইপিজেড স্থাপন করা হয়েছে। যা দুদেশের বাণিজ্য সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে আসবে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির দৃশ্যপট খুবই খুবই ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের জুনে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩২টি দেশের মধ্যে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত থেকে উত্তরণ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের জন্যও একটি ইতিবাচক আভাস। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া। এর আগে তৈরি পোশাক খাতের কোরিয়া যেভাবে বাংলাদেশের অংশীদার ছিল, এবার অবকাঠামো খাতেও সেভাবে অংশীদার হতে চায়।

পার্ক ইয়ং-সিক বলেন, ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্চারামপুর সড়কে মেঘনা সেতু প্রকল্প, মেঘনা নদী থেকে বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিব শিল্প নগরে (বিএসএমএসএন) পরিশোধিত পানি সরবরাহ নিয়ে যৌথ পিপিপি প্ল্যাটফর্ম বৈঠকের কলাকৌশলের মাধ্যমে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এসব আলোচনায় আরও এগিয়ে যাবে বলে আমি জোরালো প্রত্যাশা করছি। বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগে এ প্রকল্প কোরীয় কোম্পানির জন্য কঠিন পরীক্ষা হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশংসা করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আগামী ৫০ বছরে এ সম্পর্ক আমরা আরও এগিয়ে নিতে চাই। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক সহযোগী হিসেবে আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশংসা করি।

তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। তবে শিক্ষা, প্রযুক্তি বিনিময়, উদ্ভাবন, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে যৌথভাবে কাজ করার আরও সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ইদানিং বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার কে পপ, সোপ অপেরাসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দুই দেশের এ সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও জোরদারের প্রত্যাশা করেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইপিএস কোটায় দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়ে থাকে। আগামীতে এর আওতা আরও বৃদ্ধি হবে বলে আশা করি। দক্ষিণ কোরিয়ার শিপবিল্ডিং ও কৃষিখাতসহ অন্যান্য খাতে বিপুল মানব সম্পদের চাহিদা রয়েছে। আশা করি দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বাংলাদেশ থেকে আরও শ্রমিক নেবে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বিকাশে দক্ষিণ কোরিয়ার অবদানের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ খাতে আরও বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন, সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হেয়ক জেওং, কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকস অ্যান্ড ট্রেডের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ডংসু কিম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক শাহ মুহম্মদ মাহবুব, এডিবির সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুন চ্যান হং, কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকস অ্যান্ড ট্রেডের সেন্টার ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি রিসার্চ বিভাগের জিহান চু, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, কেবিসিসিআইয়ের পরিচালক অ্যাডওয়ার্ড কিম এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সিলিয়া শাহনাজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে ১৬ কোটি টাকা প্রণোদনা
পরবর্তী নিবন্ধবড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উত্তোলন বন্ধ