বাজার মূলধন হারালো ২ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : হ্যাকাররা একাধিক ব্যাংক হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করছে, প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে, সামনে রিজার্ভ কমে যেতে পারে, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) হ্যাকিংয়ের কবলে পড়েছে- এমন নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ায় গেল সপ্তাহে পর পর দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে অ্যাসেট ম্যানেজার ও ফান্ড ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান, শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই বৈঠকের খবরে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়।

এমন পতন-উত্থানের সপ্তাহে শেষ পর্যন্ত পতনের পাল্লায় ভারি হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারবাজারে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার পাঁচগুণ বেশি। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দুই হাজার কোটি টাকার ওপর কমে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। পাশাপাশি কমেছে লেনদেন।

গেল সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে হ্যাকাররা একাধিক ব্যাংক হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করছে। এছাড়া প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে। সামনে রিজার্ভ কমে যেতে পারে এমন গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। এতে ওই দিন শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়।

এছাড়া মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবসে বন্ধ থাকায় শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়নি। আর বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পর পরই গুজব ছড়িয়ে পড়ে হ্যাকিংয়ের কবলে পড়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ। এতে ওইদিন শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়।

টানা দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলে বৃহস্পতিবার অ্যাসেট ম্যানেজার ও ফান্ড ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান, শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথক দুটি বৈঠক করে বিএসইসি। ওই বৈঠক থেকে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় অ্যাসেট ম্যানেজার ও ফান্ড ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান, শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রতি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানায় বিএসইসি।

আর এসব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে একমত পোষণ করেন। অংশীজনদের নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই বৈঠকের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ে। এতে সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়।

এমন বাজারে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ২ কোটি ১৬৪ টাকা বা দশমিক ২৮ শতাংশ। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে।

এদিকে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ২৭টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৫টির। আর ২২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৪২ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচক কমে হয় ৩২ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বা দশমিক ৫২ শতাংশ। এর মাধ্যমে টানা চার সপ্তাহ কমলো ডিএসইর প্রধান সূচক।

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গেল সপ্তাহে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গেল সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ২১ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৯ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর মাধ্যমে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক টানা পাঁচ সপ্তাহ কমে।

অপরদিকে প্রধান মূল্যসূচকের মতো টানা চার সপ্তাহ কমেছে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৯ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৬ শতাংশ।

সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৭২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪১৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৪১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বা ১০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৯০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ২ হাজার ৭১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন কমেছে ৫৮১ কোটি ৮ লাখ টাকা বা ২৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। মোট লেনদেন বেশি হারে কমার কারণ গেল সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। এসময় কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬১ কোটি ২১ লাখ টাকা। ৪৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সোনালী পেপার।

এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, জেমিনি সি ফুড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রাদার পিপি ওভেন ব্যাগ, আরডি ফুড এবং এমারেল্ড অয়েল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউত্তাল বঙ্গোপসাগর, বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত
পরবর্তী নিবন্ধশফিউদ্দিন শামীম এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত