নিউজ ডেস্ক : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও অন্যান্য মালামাল পরিবহনের সুবিধার্থে যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনে একটি করে পণ্যবাহী কোচ বা ‘লাগেজ ভ্যান’ সংযোজন করা হচ্ছে। এতে পণ্য পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি লোকসানে জর্জরিত রেলওয়ের আয় বাড়বে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ১২৫টি লাগেজ ভ্যান (বগি) যুক্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৭৫টি মিটারগেজ লাইনের ট্রেনে ও ৫০টি ব্রডগেজ লাইনের ট্রেনে। ব্রডগেজে ১০টা রেফ্রিজারেটর (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচ) এবং মিটারগেজে ১৬টা রেফ্রিজারেটর থাকবে। এতে খুলনা বা কক্সবাজার থেকে মাছ ও অন্যান্য পণ্য আনা যাবে।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে এ সেবার উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ থেকে জানা গেছে, চীন থেকে ৭৫টি এমজি লাগেজ ভ্যান আমদানি করা হচ্ছে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে (যাত্রীবাহী ট্রেনে) একটি করে লাগেজ ভ্যান যুক্ত হবে। এর মধ্যে চীন থেকে প্রথম চালানের ২০টি লাগেজ ভ্যান চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে পাহাড়াতলী কারখানায় এসেছে। পর্যায়ক্রমে অন্য লাগেজ ভ্যানগুলোও দেশে আসবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলাম গত ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) বরাবর দেওয়া একটি চিঠিতে চট্টগ্রাম–সিলেট এবং সিলেট–চট্টগ্রাম রুটে চলাচলরত আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম–ময়মনসিংহ–চট্টগ্রাম রুটে চলাচলরত বিজয় এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম–ঢাকা–চট্টগ্রামের রুটের মহানগর এক্সপ্রেস ও চট্টলা এক্সপ্রেস, ঢাকা–সিলেট–ঢাকা রুটের জয়ন্তিকা ও উপবন এক্সপ্রেস, ঢাকা–সিলেট–ঢাকা রুটের পারাবত এক্সপ্রেসসহ ১৬টি ট্রেনে নতুন লাগেজ ভ্যান সংযোজনের প্রস্তাব করেছেন।
এর আগে করোনার সময় ঢাকায় খাদ্য পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পার্সেল ও কৃষি ট্রেন চালু করে রেলওয়ে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রেলের আয়ের অন্যতম খাত পণ্য পরিবহন। এটি করা হয় লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে। বর্তমানে রেলওয়েতে ৪১টি মিটারগেজ ও ১০টি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যান আছে। এর বেশিরভাগের অর্থনৈতিক আয়ু শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। ফলে, পণ্য পরিবহন থেকে যথেষ্ট আয় করতে পারছে না রেলওয়ে।
এর আগে সরকার ২০১৮ সালের ২৬ জুন পণ্য পরিবহন ও যাত্রী সেবার মানোন্নয়নে আধুনিক, নিরাপদ এবং গুণগত মানসম্মত রোলিং বহরে স্টক যুক্ত করার লক্ষ্যে ৩ হাজার ৬০২ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন প্রকল্পের (রোলিং স্টক সংগ্রহ) অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২ হাজার ৮৩৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ঋণ দেবে।
সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ রেলওয়ে ও চীনের মধ্যে ওই লাগেজ ভ্যান সংগ্রহে দুটি চুক্তি সই হয়। যদিও ২০২২ সালের জুলাই থেকে এসব লাগেজ ভ্যান বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল।
সড়ক পথের চেয়ে রেলে পরিবহন খরচ কম ও ঝামেলামুক্ত হওয়ার কারণে ব্যবসায়ী, প্রান্তিক চাষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। এই সেবা চালুর মাধ্যমে অতীতের মতো আবারও রেলে পণ্য পরিবহনের সেই জৌলুস ফিরে আসবে বলে মনে করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।