নিউজ ডেস্ক : বিদ্রোহের চেষ্টা বা অংশগ্রহণ এবং ষড়যন্ত্রে উসকানি দেওয়ার গুরুতর অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উঠছে আজ (সোমবার ০৪ সেপ্টেম্বর)।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
গত বছর আইনটি মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। আইনে ৩৩টি ধারা রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো কার্যপত্রে বলা হয়, ব্যাটালিয়ন আনসার আইন, ১৯৯৫ ধারা ৬ (ক) মোতাবেক বর্তমানে ব্যাটালিয়ান আনসার সদস্যদের চাকরি স্থায়ীকরণের সময়সীমা ৬ বছর। তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের সময়সীমা শূন্য, বছরে নিয়ে আসা অর্থাৎ চাকরিতে যোগদানের তারিখ থেকে স্থায়ীকরণের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ২০১৮ সালে জুলাই মাসে প্রস্তাব পাঠানো হয়। তখন বলা হয়, বিদ্যমান আইনটির একটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব যথাযথ নয়।
পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনার আলোকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে আইন, ২০১০ এ বিদ্রোহ সংক্রান্ত অপরাধ, শাস্তির যে সব বিধান রয়েছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাটালিয়ন আনসার আইন, ১৯৯৫ এর পরিবর্তে বর্তমান আনসার ব্যাটালিয়ন আইন-২০১৯ প্রণয়ণের কার্যক্রম চলামান রয়েছে। গত বছর দেখা গেল, ১৯৯৫ সালের একটি আইন ছিল, চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধন করতে গিয়ে আরও দেখা গেল অনেক বেশি পরিবর্তন করতে হয়, সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয় এটা পরিবর্তন করার দরকার নেই, নতুন করে আনসার ব্যাটালিয়ন আইন প্রণয়ন করা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়।
খসড়া অনুযায়ী, বর্তমানে কোনো আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত নেই। ডিসিপ্লিনারি (অসদাচরণ) বিষয়ের জন্য রুল আছে। ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিং হবে।
বাহিনীর অস্ত্র, গোলাবারুদ, পোশাক, যন্ত্রাংশ ও যানবাহনের অংশ পরিকল্পিতভাবে বিনষ্ট করা ও এ সংক্রান্ত অপরাধের জন্য সংক্ষিপ্ত ব্যাটালিয়ন আদালতে সর্বোচ্চ তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও আর্থিক ক্ষতির ক্ষেত্রে সমপরিমাণ অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে। অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া যাবে।
আর যদি অপরাধ শৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে বা বিদ্রোহের চেষ্টা করে বা প্ররোচনা দেন বা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকেন তাহলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড বা কমপক্ষে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হবে। এই বিচার হবে বিশেষ আনসার আদালতে।
খসড়া আইন অনুযায়ী, ব্যাটালিয়নের কোনো সদস্য কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো আনসার সদস্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা কোনো সংবাদপত্র বা কোথাও কোনো তথ্য প্রকাশ করা বা এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না। সরকারি কর্মচারীদের মতো তাদেরও শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুযায়ী লঘু ও গুরুদণ্ড থাকবে। মামলায় আপিল করা যাবে।
ব্যাটালিয়নে কোনো সদস্যের অপরাধ সংগঠনের জন্য বিচারের ব্যবস্থা রাখা রয়েছে। দুটি আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত থাকবে। একটা সংক্ষিপ্ত ব্যাটালিয়ন আদালত, আরেকটা বিশেষ আনসার আদালত।
খসড়া অনুযায়ী, যদি কেউ বিদ্রোহের চেষ্টা করে, উসকানি দেয় বা ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়, তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ন্যূনতম পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।
সংক্ষিপ্ত আদালত সাধারণ অপরাধ এবং অসদাচরণের বিচার করবে। আর বিশেষ আদালত গুরুতর অপরাধের বিচার করবে। প্রস্তাবিত আইনের অধীনে একটি ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আপিল ট্রাইব্যুনাল’ থাকবে।