বিমার দাপটে ৬শ কোটি টাকা ছাড়ালো লেনদেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : পতন কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে দেশের শেয়ারবাজার। গত কয়েক কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। সেই সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

গত কয়েক কার্যদিবসে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী রাখতে বিমা খাত তেমন ভূমিকা রাখতে না পারলেও আজ সূচক ও লেনদেন বাড়াতে মূখ্য ভূমিকায় ছিল খাতটি। বিমা খাতের প্রায় সবকটি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ায় একদিকে মূল্যসূচক যেমন বেড়েছে, তেমনি বড় হয়েছে দাম বাড়ার তালিকা। সেই সঙ্গে এক মাস পর ডিএসইতে ৬০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলার মাধ্যমে শেষ সাত কার্যদিবসের মধ্যে ছয় কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকলো শেয়ারবাজার। অবশ্য এর আগে নানা গুজবে শেয়ার বাজারে টানা দরপতন দেখা দেয়। সেই সঙ্গে দেখা দেয় লেনদেন খরা। ডিএসইতে লেনদেন কমে দুইশ কোটি টাকার ঘরে নেমে যায়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।

এখন সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকায় এবং ধীরে ধীরে লেনদেনের গতি বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক কিছুটা হলেও কমে এসেছে। সেই সঙ্গে বাজারে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া কিছু বড় বিনিয়োগকারী আবার নতুন করে সক্রিয় হয়েছে বলে বাজারে গুঞ্জন রয়েছে। এ বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরেই বিমা শেয়ারে আটকে রয়েছে। এখন তারা বিমার শেয়ার থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, শেয়ারবাজারের আলোচিত এক বিনিয়োগকারী যিনি সরকারি চাকরিতে আছেন, তিনি শেয়ারবাজার থেকে বড় অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়ে বাজারে নিষ্ক্রেয় হয়ে পড়েন। তবে সাম্প্রতি সময়ে ওই বিনিয়োগকারী আবার সক্রিয় হয়েছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে তার অনুসারীদের বাজারে সক্রিয় থাকার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, কয়েক কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। তার মানে এ নয় বাজার সংকট থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে এসেছে। শেয়ারবাজার বরাবরই চ্যালেঞ্জিং। বর্তমান পরিস্থিতিতেও বুঝে শুনে বিনিয়োগ করা উচিত। ভালো শেয়ার বাছাই করে বিনিয়োগ করতে পারলে লাভ হবে। কিন্তু গুজবে শেয়ার কিনলে লোকসানের সম্ভাবনাও আছে।

তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর ধরেই শেয়ারবাজারে বিমার শেয়ার নিয়ে একটি চক্র বেশ সক্রিয়। তারা বিভিন্ন সময় বিমার শেয়ার দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে এবং বিমার শেয়ার থেকে মোটা অঙ্কের মুনাফা করেছে। তবে বিমা কোম্পানির শেয়ার থেকেই সেই চক্র বিনিয়োগ পুরোপুরি তুলে নিতে পারেনি। এ কারণে মাঝে মধ্যেই এই চক্রটি বিমার শেয়ার টেনে ওপরে তোলার চেষ্টা করে। এখন সেই চেষ্টায় হয় তো চলছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। সেই সঙ্গে লেনদেনেও ভালো গতি দেখা যায়। এতে প্রথম আধাঘণ্টাতেই ডিএসইতে প্রায় এক’শ কোটি টাকা লেনদেন হয়ে যায়। সেই সঙ্গে এক’শ এর বেশি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। মূল্যসূচকেরও বড় উত্থান হয়।

লেনদেনের শুরু থেকেই দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখাতে থাকা বিমা খাত। যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে শেষদিকে কিছু বিমা কোম্পানির দাম বাড়ার প্রবণতা কিছুটা কমে। এরপরও দিনের লেনদেন শেষে ৪৫টি বিমা কোম্পানি দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেয়। বিপরীতে দাম কমেছে মাত্র একটির।

বিমার এমন দাপটের দিনে লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ১২২ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৫টির। আর ১৭৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১২ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩১১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের গতিও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৫৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১৫৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ২ আগস্টের পর ডিএসইতে আবারও ছয়’শ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো।

গত কয়েক কার্যদিবসের মতো লেনদেনের শীর্ষ স্থানটি ধরে রেখেছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির ৫৬ কোটি ৪১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইস্টার্ণ হাউজিংয়ের ৩০ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, জেমিনি সি ফুড, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এমারেল্ড অয়েল, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ১৭০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২১টির এবং ৭৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদাম বাড়ল এলপিজির
পরবর্তী নিবন্ধ৬ মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স আগস্টে