নিউজ ডেস্ক : যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যখন এসব শুরু করি, অনেকে সমালোচনা করেছে। যেভাবে রাস্তাঘাট করে দিয়েছি, যেকোনো জেলা থেকে দ্রুত মানুষ ঢাকায় আসতে পারে।
সরকারের উন্নয়ন যারা দেখে না তাদের ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে চক্ষু ইনস্টিটিউটে চোখের চিকিৎসা নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের স্মরণে শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত ‘ছাত্র সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিএনপি কখনও দেশের কল্যাণ চাইতে পারে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ লুটেরারা সন্ত্রাসে বিশ্বাসী। এরা মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। ১০ ট্রাক অস্ত্র, জঙ্গি, প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা দেশকে হেয় করেছে। তারা জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়। তাদের জন্মই অবৈধ মিলিটারি ডিক্টেটরের হাতে। তারাই এখন গণতন্ত্রের কথা বলে। তারা এদেশের কল্যাণ চাইতে পারে না।
যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে তখন মানুষের কল্যাণ হয়েছে উল্লেখ করে দলের সভাপতি বলেন, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম, নিজের জন্য কিছু করতে আসিনি। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছি। সন্তানদের শিক্ষা দিয়েছি, ধন-সম্পদ কোনো কিছুই কাজে লাগে না।
মিথ্যা অপবাদে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া ও নিজের টাকায় তা বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, একটা ব্যাংকের এমডি পদের জন্য, সেটাও সরকারি, সেই সরকারি বেতনধারী… আইনে আছে ৬০ বছরের বেশি থাকতে পারবে না। তারপরও ১০ বছর বেআইনিভাবে থেকে আরও থাকতে হবে। এ নিয়ে আমাদের ওপর একটি বড় দেশের চাপ। এমডি না রাখলে না কি পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করবে। আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে সেই লোক মামলাও করেছে, মামলায় হেরে যায়। তারপর বিদেশি বন্ধু দ্বারা… বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে এ সিদ্ধান্ত হয়নি। হিলারি ক্লিনটন বিশ্বংব্যাকের সভাপতিকে দিয়ে বন্ধ করে।
তিনি বলেন, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে বিশ্বকে দেখিয়েছি এদেশের মানুষ পারে, তা করে দেখিয়েছি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালি জাতিকে দাবায়ে রাখতে পারেনি। দেখিয়েছি চাইলে আমরা নিজের টাকায় করতে পারি। এরপরই বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে।
এ সময় বঙ্গবন্ধুর লেখা বইগুলো পড়তে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। একইসঙ্গে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে অনাবাদি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে এবং বৃক্ষরোপণ করাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
বিকেল পৌনে ৪টায় জাতীয় সংগীত ও ছাত্রলীগের দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে ছাত্র সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশ মঞ্চে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র সমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে সমাবেশে যোগ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাকার বাইরের যে নেতাকর্মীরা এসেছেন তাদের অনেকে রাতে রওনা দিয়ে সকালে টিএসসিতে এসে পৌঁছান। সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা বাস, লঞ্চ, ট্রেন, মাইক্রোবাসে ঢাকায় আসেন।
দুপুরের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সমাবেশ শুরুর আগেই সমাবেশস্থল লাখো ছাত্র-ছাত্রীর জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
সমাবেশ শুরুর আগে বৃষ্টিতে ভোগান্তি পড়েন ছাত্র সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা। হঠাৎ বৃষ্টিতে অনেককে খোলা মাঠ ছেড়ে আশপাশের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। বিকেল ৩টায় ছাত্র সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও বৃষ্টি-বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাতে কিছুটা বিলম্ব হয়।