জমে উঠেছে বাপার ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসি-বি) চলছে নবম বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো। স্টলের সংখ্যা, পণ্যের বৈচিত্র্য, প্রযুক্তির সমাহার—সব দিক দিয়েই এবার বড় হয়েছে মেলার পরিধি। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য, যন্ত্র, প্রযুক্তি ও পরিষেবার পাশাপাশি হাজারও অভ্যন্তরীণ এবং রপ্তানি কৃষিপণ্যের পসরা সেজেছে এবার এক আঙিনায়, পেয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। আর শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ছুটির দিন হাওয়ায় এ মেলা জমে উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলার দ্বিতীয় দিনে ভিড় নজরকাড়া। মেলার পাঁচটি প্যাভিলিয়ন প্রাঙ্গণে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের স্টলে ছিল দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস। খাদ্যপণ্যের বিভিন্ন উপকরণ জায়গা করে নিয়েছে মেলাজুড়ে, এগুলোতে আগ্রহ বেশিরভাগ ক্রেতা-দর্শনার্থীর। অন্যদিকে, খাদ্য উৎপাদন প্রযুক্তি আর কৃষিপণ্যের কত কিছুই না জায়গা করে নিয়েছে এসব স্টলে, সেখানে ভিড় করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। দেশি-বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতারা মেলার স্টলগুলোতে ঘুরছেন, জানছেন এবং কিনছেন।

দেশি বেশকিছু প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পণ্যে দিচ্ছে বিশেষ ছাড়। আইসিসি-বির এক নম্বর প্যাভিলিয়নে রয়েছে প্রাণের স্টল। দেশি প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের সবচেয়ে বড় পসরার স্টল এটি। সেখানে পানীয়, কেক ও বিস্কুট, গুঁড়ো মশলা ও কালিনারি পণ্য, নুডলস, ডেইরি পণ্য, স্ন্যাকস (নাস্তা), ফ্রোজেন ফুডসসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য দৃষ্টি কাড়ছে দর্শনার্থীদের।

প্রাণ বেভারেজের ম্যানেজার খন্দকার আব্দুল ওয়াদুদ (আকতার) বলেন, ছুটির দিনে ক্রেতা দর্শনার্থীর উপস্থিতি খুব ভালো। তারা আমাদের পণ্যে বিশেষ আকর্ষণ দেখাচ্ছেন, সেটা খুব আনন্দদায়ক আমাদের জন্য।

তিনি বলেন, আমাদের অ্যালোভেরা জুস এবং বাসিল সিড ড্রিংকস অনেক আগে থেকেই রপ্তানি হচ্ছে। যা এখন স্থানীয় বাজারে আনার জন্য প্রদর্শন করছি। অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি। এছাড়া প্রাণের প্যাভিলিয়নে প্রায় ২০০ ধরনের পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। যা এ মেলায় সর্বোচ্চ। দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি হয় এমন পণ্যের পাশাপাশি এ স্টলে রয়েছে রপ্তানি পণ্যও।

এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) ও রেইনবো এক্সিবিশন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস (রিমস)। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) তিন দিনব্যাপী এ এক্সপো উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। আগামী শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত চলবে এক্সপো, যা সবার জন্য উন্মুক্ত।

মেলায় হিফস এগ্রো ফুডের ম্যানেজার আনিসুর রহমান বলেন, আজ বিক্রি বেড়েছে। দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি। আশা করছি, কালও ছুটি আছে, বিক্রির পরিমাণ বাড়বে। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও আমাদের পণ্য যাচ্ছে। অনেক বিদেশি ক্রেতা আসছেন, যারা পণ্য সম্পর্কে জানছেন।

কুকড মিলের প্রচারণা করছে বেঙ্গল মিট। বেঙ্গল মিটের হেড অব রিটেল সেলস মোহাম্মদ হারিস বলেন, এখানে খুব সহজ আমরাই নতুন পণ্যটির প্রচারণা করতে পারছি। আমরা মনে করছি, পণ্যটি খুব জনপ্রিয়তা পাবে। কুকড মিল রান্নার প্রয়োজন হয় না, এটি ওভেনে গরম করে যে কেউ খেতে পারবেন।

মেলার বিষয়ে বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক বলেন, বাপা শুরু থেকেই ফুড প্রসেসিং খাতের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বাপার মূল লক্ষ্যই হলো— এ খাতের ক্রমবর্ধমান বিকাশ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া। ফুড প্রসেসিং খাত এবং এর সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ও সার্বিক সমন্বয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও বেগবান হবে। আর এ খাতকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে এ ধরনের মেলা সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে বাপা আশাবাদী।

আয়োজক সংস্থা রিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চানমোহন সাহা বলেন, মেলা নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য-প্রযুক্তি ক্রেতার সামনে তুলে ধরতে উদগ্রীব। শুরু থেকেই ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি, শনিবার শেষ দিনেও প্রচুর দর্শনার্থী আসবে।

বাপা এক্সপোতে রয়েছে— খাদ্যশিল্প সংশ্লিষ্ট ২১৩টি স্টল। দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মেলায় ভারত, চীন, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, স্লোভেনিয়াসহ প্রায় ২০ দেশের শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। তারা মেলায় খাদ্যশস্য বীজ ও সার থেকে শুরু করে হিমাগার তৈরি, খাদ্য সংরক্ষণ ও তৈরির প্রযুক্তি, নানা ধরনের ফুড ইন্ডাস্ট্রি ম্যাটেরিয়ালস (খাদ্যশিল্পের উপকরণ), প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়ালস (মোড়কজাত উপকরণ), ফুড সার্ভিসেস (সেবা) এবং দেশি-বিদেশি প্রায় সব ধরনের ফুড প্রোডাক্ট (খাদ্যপণ্য) প্রদর্শন করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে হালাল মাংস রপ্তানি করতে চায় মেক্সিকো
পরবর্তী নিবন্ধসবজিতে ক্রেতাদের অস্বস্তি, মুরগির দাম কমেছে